ভারত-চিন যুদ্ধের মাশুল গুনতে হতে পারে কাশ্মীরের শাল শিল্পকে, তৈরি হচ্ছে আশঙ্কা

একদিকে লাদাখের সীমান্ত অঞ্চলে বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা। আর ঠিক তখনই ঘরে থাকা গুটিকতক পশমের গোছের উপর আলগা হাত বোলাচ্ছেন কাশ্মীরি শালের শিল্পীরা। বলছেন, এবার হয়তো আর শাল বুনতে পারবেন না তাঁরা। কারণটা আর কিছুই না। দুই দেশের যুদ্ধের ফলেই মার খাচ্ছে পশমের উৎপাদন। আর এই সময় পাহাড়ি ছাগলের শরীর থেকে পশম তুলে নিতে না পারলে আর ভালো জাতের শাল বুনবেন কীকরে?

সীমান্ত তো দুটো দেশের মধ্যে থাকে। প্রকৃতির কোনো সীমান্ত থাকে না। সীমান্ত থাকে না প্রকৃতির বুকে বেড়ে ওঠা প্রাণীদেরও। তাই প্রতি বছর গ্রীষ্মের সময় তিব্বত থেকে কাশ্মীরে চলে আসে পাহাড়ি ছাগলের দল। সঙ্গে থাকে তাদের প্রতিপালক যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষ। এদের দেশ কোথায়, এতদিন প্রশ্ন করেননি কেউ। গরমের সময় ছাগলের শরীরে লম্বা লম্বা লোমের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। তাই সেই লোম তুলে নিয়ে শালের ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করেন যাযাবররা। এরপর সেই পশমের শাল শীতকালে চলে যায় দেশের নানা প্রান্তে। সেই শাল কিন্তু খাঁটি ভারতীয় বলেই স্বীকৃত।

কিন্তু এবারের যুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে কাশ্মীরি শালের নাগরিকত্ব নিয়েও। আসলে সীমান্তের কাছে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক হাজার পাহাড়ি ছাগল। সঙ্গে তাদের প্রতিপালকরাও। চিন বা ভারত, কোনো দেশের সেনারাই তাদের সীমান্ত পারাপারের অনুমতি দিতে নারাজ। আর এই অবস্থায় প্রায় ৩০০০ নবজাতক ছাগলের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করছেন কাশ্মীরি শালের ব্যবসায়ীরা।

একদিকে আধুনিক কারখানাজাত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছু হটছে একাধিক ঐতিহ্য। অন্যদিকে আরেক শত্রু হানা দিয়েছে। তার নাম যুদ্ধ। অথচ এসবের মাঝেও নীরবে দাঁড়িয়ে আছে লাদাখ উপত্যকা। তার মনে কোনো বিদ্বেষ নেই। এদেশের ধর্মই যে 'বসুধৈব কুটুম্বকম'।

Powered by Froala Editor