আমাজনের (Amazon) গভীর অরণ্য। চতুর্দিক মুখরিত হয়ে আছে পাখির কোলাহলে। নাম না জানা সেসব পাখির সন্ধান পেতে গাছের দিকে তাকাতেই চোখে পড়বে দৃশ্যটা। গাছের ডাল থেকে ঝোলানো রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এমন দুর্গম অঞ্চলে সিসিটিভি ক্যামেরার দর্শন পেলে বেশ অবাকই হতে হয়। কিন্তু কারা ঝুলিয়েছে এই সিসিটিভি ক্যামেরা? এই জনমানবহীব ঘন অরণ্যে এমন ক্যামেরা লাগানোরই বা প্রয়োজন কী?
উত্তরটা খুবই সহজ। অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করতেই এই বন্দোবস্ত। আমাজনে অরণ্যনিধন, লগিং, অবৈধ খনন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে তোলপাড় হচ্ছে গোটা বিশ্ব। অথচ, তা নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই ব্রাজিল প্রশাসনের। উল্টে অরণ্য নিধনে প্রচ্ছন্ন মদতও রয়েছে ব্রাজিল রাষ্ট্রপতির। জের বলসোনারোর আমলে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে অরণ্য ধ্বংসের পরিমাণ এবং লগারদের বাড়বাড়ন্ত। তাতে যে শুধু প্রকৃতির ক্ষতি হচ্ছে, এমনটা নয়। একই সঙ্গে বিপর্যস্ত মাটির ভূমিপুত্রদের জীবনও।
অরণ্যনিধন আটকাতে এবং নিজেদের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতেই তাই প্রযুক্তির শরণাপন্ন হয়েছেন ব্রাজিলের পারা প্রদেশের মুন্ডুরুকু উপজাতির মহিলারা। ড্রোন ক্যামেরা, সিসিটিভি মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করেই তাঁরা লড়াই করছেন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে।
এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছেন মুন্ডুরুকু জনগোষ্ঠীর তিন তরুণী— আলদিকা আকাই, বেকা মুন্ডুরুকু এবং রিলসেলিয়া আকাই। মূলত আলদিকার হাত ধরেই ব্রাজিলের এই গহীন অরণ্যে প্রযুক্তি এসে পৌঁছায় ২০১৯ সাল নাগাদ। শহরাঞ্চলে পড়াশোনার জন্য দীর্ঘদিন কাটানোর সময়ই, প্রযুক্তির সঙ্গে সড়োগড়ো হয়ে উঠেছিলেন আলদিকা। তবে জীবননির্বাহের জন্য শহরে না থেকেই, ফের অরণ্যেই ফিরে আসেন তিনি। শুরু হয় অবৈধ অরণ্যনিধনের বিরুদ্ধে লড়াই।
আরও পড়ুন
আমাজনের গাছের শরীরে বিষাক্ত পারদ, শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা
প্রাচীন জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত অরণ্যজুড়েই আলদিকা বিছিয়ে রেখেছেন সিসিটিভি ক্যামেরার জাল। সেইসঙ্গে রয়েছে ড্রোনের ব্যবস্থাও। সেই ক্যামেরাবন্দি ছবি ছবি এবং ভিডিওই সরাসরি আলদিকারা প্রকাশ করেন ইনস্টাগ্রাম-সহ একাধিক সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়িয়ে, বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তের পরিবেশকর্মী এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তিত্বদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। আর তাঁদের এই প্রকল্প সাফল্যও পেয়েছে যথেষ্ট।
আরও পড়ুন
পরিকল্পিতভাবে কীটনাশক ছড়িয়ে আমাজন ধ্বংস, অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের
আলদিকাদের তোলা ভিডিও ঝড় তুলেছিলেন সদ্য হয়ে যাওয়া কপ-২৬ সম্মেলনেই। ২০১৯ সালে অরণ্যের সংরক্ষিত অঞ্চলে ২৭টি খনি তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল ব্রাজিলের ন্যাশনাল মাইনিং এজেন্সি। আন্তর্জাতিক চাপের সম্মুখীন হয়ে সেই খনিগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ব্রাজিল প্রশাসন। প্রযুক্তির সাহায্যে এই লড়াই একইভাবে অবৈধ লগিং-ও ধীরে ধীরে কমিয়ে আনবে বলেই বিশ্বাস মুন্ডুরুকু সম্প্রদায়ের তিন তরুণীর। এই সাহসিকতার সামনে ম্রিয়মান হয়ে যায় যেকোনো কুর্নিশই…
আরও পড়ুন
এক বছরে দাবানলে ১৭ মিলিয়ন প্রাণী মৃত আমাজনে
Powered by Froala Editor