প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেই বৃক্ষচ্ছেদন রুখছেন আমাজনের আদিবাসীরা

প্রশাসন ও বনকর্মীদের চোখ এড়িয়ে জঙ্গলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বে-আইনিভাবে গাছ কাটা চলছে। কিন্তু প্রশাসনের চোখ এড়াতে পারলেও, অরণ্যবাসী মানুষের চোখ এড়িয়ে যাওয়া কি সম্ভব? হ্যাঁ, তাঁদের বাসস্থানের আশপাশ দিয়ে না গেলেই হল। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে গাছ কাটা চলছিল। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে তেমনটা আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ অরণ্যবাসী মানুষদের সঙ্গেও এখন রয়েছে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি। আমাজনের অরণ্যকে বাঁচাতে এবার হাতিয়ার এই প্রযুক্তিই। পরিবেশ ও প্রযুক্তির সম্পর্ক যে সবসময় বিদ্বেষপূর্ণ নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যেই পরিবেশ রক্ষাও সম্ভব, সেটাই প্রমাণ করছে পেরুর উদ্যোগ। আর এর ফলে বিগত ৪ বছরে পেরুতে বে-আইনি গাছ কাটার পরিমাণ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।

প্রায় ৪ দশক ধরেই আমাজনের অরণ্যে বে-আইনি বৃক্ষছেদন নিয়ে চিন্তিত পেরু প্রশাসন। মোট অরণ্যের এক তৃতীয়াংশই অবস্থিত পেরুর মধ্যে। আর এখানে প্রায় ৩ হাজার আদিবাসী উপজাতির বাস। প্রশাসন ও বনবিভাগ বহু চেষ্টা করেও গাছকাটা রুখতে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। আর তার মধ্যেই অভিনব এক পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয় কয়েকটি পরিবেশ সংরক্ষক গোষ্ঠী। গাছকাটা রুখতে সবচেয়ে বেশি তৎপর অরণ্যবাসী মানুষরাই। কারণ এর সঙ্গে তাঁদের খাদ্য-বাসস্থানের সম্পর্ক জড়িয়ে। কিন্তু বিরাট অরণ্যে কোথায় কীভাবে বে-আইনি ব্যবসায়ীরা ঢুকে পড়ছেন, তা বোঝা সত্যিই কঠিন। আর এর জন্য তাঁদের প্রয়োজন শুধু স্মার্টফোন। যার সঙ্গে স্যাটেলাইট যোগাযোগ তৈরি করা সম্ভব।

২০১৭ সালে ৭২টি উপজাতি সম্প্রদায়কে বেছে নিয়ে পৃথক পৃথক বাহিনী তৈরি করা হয়। প্রত্যেক উপজাতির ১০-১২ জন সদস্যের হাতে তুলে দেওয়া হয় ফরেস্ট ট্র্যাকার অ্যাপ্লিকেশন-সহ স্মার্টফোন। কীভাবে এই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হবে, তাও শিখিয়ে দিয়েছিলেন পরিবেশকর্মীরা। আর তারপর বাকিটা করেছিলেন অরণ্যবাসী মানুষরাই। যেখানেই বে-আইনিভাবে গাছ কাটার সংকেত পেয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তারপর আততায়ীদের ধরতে পারলে বিচারসভা বসেছে। সাধারণত কিছু ছোটোখাটো শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন উপজাতির মানুষরাই। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বে-আইনি মাদকচক্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষরাও ধরা পড়েছেন। তখন তাঁদের তুলে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের হাতে। এর ফলে প্রথম বছরেই ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বৃক্ষছেদন কমিয়ে আনা গিয়েছে। আর তার পরের বছরেও এই অগ্রগতি বহাল থেকেছে। ৪ বছরে সংখ্যাটা ৬০ শতাংশ অতিক্রম করে গিয়েছে। আমাজন রক্ষার এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগ যে ১০০ শতাংশ সফল, সে-কথা বলাই যায়। তাই এবার অরণ্যের বাকি অধিবাসীদেরও এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার কথা ভাবছে পেরু প্রশাসন।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আমাজন কেটে দীর্ঘতম মহাসড়ক নির্মাণ ব্রাজিলে, অনুমোদন আদালতের