মাত্র ৩ বছর আগের কথা। ২০১৮ সালে দুবাইতে অনুষ্ঠিত দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি ভারত এবং পাকিস্তান। পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতল ভারত। সেই বিশ্বকাপজয়ী দলের প্রথম একাদশেই ছিলেন গুজরাটের খেলোয়াড় নরেশ তুমদা। দলের বাকিদের সঙ্গে তিনিও রাষ্ট্রীয় সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন। কিন্তু ৩ বছরের মধ্যে দৃশ্যটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। নরেশ এখন তাঁর গ্রাম নবসারিতে একটি ইঁটভাটায় কাজ করেন। কোনো কোনোদিন সকালে সবজি নিয়ে বাজারেও বসেন। এই করোনা পরিস্থিতিতে পরিবারের বাকি সদস্যদের মুখে দুমুঠো খাবার তো তুলে দিতে হবে।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নরেশ জানিয়েছেন, পদকজয়ের প্রাথমিক উচ্ছাস মিটে যেতেই আর কারোর থেকে কোনো সাহায্য পাননি তিনি। এদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সবধরনের কাজ তিনি করতেও পারবেন না। তবে কোনো সরকারি অফিসের কাজ পেলে অনায়াসেই করতে পারবেন, সেটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতা তাঁর আছে, জানিয়েছেন নরেশ। কিন্তু কে দেবে কাজ? বিশ্বকাপ জয়ের সাম্মানিক হিসাবে প্রাপ্ত অর্থ দ্রুত শেষ হয়ে গিয়েছে। এরপর বছর দেড়েক সবজির ব্যবসা থেকে কোনোরকমে চলেছে। কিন্তু লকডাউনের ফলে বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোজগারের সেই রাস্তাটুকুও বন্ধ হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ইঁটভাটায় দিনমজুরের কাজেই যোগ দিতে হয় তাঁকে।
খেলাধুলোর প্রতি ভালোবাসা ছোট থেকেই ছিল নরেশের। তাই আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও কোনোরকমে অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন। সেইসঙ্গে আশা ছিল, খেলাধুলোয় নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে নিশ্চই সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার মতো একটা জীবিকা পাবেন। যাতে পরিবারের অভাব মেটানোর পাশাপাশি নিজের খেলাকেও আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তিনি। লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হননি নরেশ। কিন্তু বিশ্বকাপ জয়ের পরেও কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। এখন সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর আর অনুশীলন করতেও পারেন না তিনি। তবু খেলার মাঠে ফেরার স্বপ্ন পুরোপুরি ছেড়ে ফেলতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একাধিক চিঠি লিখেও কোনো উত্তর পাননি তিনি। এখন একটা যে কোনো কাজের আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছেও। নরেশ জানেন না, এই চিঠিরও কোনো উত্তর তিনি পাবেন কিনা।
টোকিও অলিম্পিকের পর যখন পদকজয়ী খেলোয়াড়দের নিয়ে সারা দেশজুড়ে উন্মাদনা তুঙ্গে, ঠিক সেই সময় বেঁচে থাকার এবং নিজের খেলার অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় যৎসামান্য রোজগারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন আরেক বিশ্বজয়ী খেলোয়াড়। কিন্তু তাঁর খবর রাখেন না কেউই। তাহলে সব উন্মাদনাই কি মরশুমি? প্রশ্ন রইল পাঠকের কাছেই...
আরও পড়ুন
সৌরভ-ঋদ্ধিমানের সতীর্থ, অবসাদে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন এই বঙ্গ ক্রিকেটার!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
এদেশের প্রথম দলিত ক্রিকেটার তিনি, ‘লগান’ সিনেমার কাছরা চরিত্রটির অনুপ্রেরণা