মানুষের তৈরি দেশের বৃহত্তম অরণ্য ছত্তিশগড়ে

খনি স্থাপন, সিমেন্ট কারখানা নির্মাণ, নগরায়ন— একাধিক বিগত কয়েক দশকে সভ্যতার অগ্রগতি আশঙ্কাজনকভাবে কোপ বসিয়েছে বনভূমির ওপর। ফলত, স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে দূষণের পরিমাণ। ধ্বংস হয়েছে বৃহত্তর বাস্তুতন্ত্রও। এবার প্রকৃতির সেই চেহারা ফেরাতেই অভিনব উদ্যোগ নিল ছত্তিশগড় প্রশাসন। দুর্গ জেলায় অবস্থিত নন্দিনী খনির কাছে প্রায় আড়াই হাজার একর জমি জুড়ে এবার অরণ্যায়ন করতে চলেছে রাজ্য সরকার। বাস্তবায়িত হলে, এই অরণ্যই হয়ে উঠবে ভারতের বৃহত্তম মানবসৃষ্ট অরণ্য।

সম্প্রতি বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে গোটা বিশ্বজুড়েই কৃত্রিম অরণ্য তৈরির বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে জাতিসংঘ। সেই প্রকল্পের অংশ হিসাবেই এই পদক্ষেপ ছত্তিশগড় সরকারের। মূলত দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং বনভূমিকে পুনরুজ্জীবিত করতেই এই কর্মসূচি। অবস্থানের দিক থেকে দেখলে নন্দিনী খনি মূলত ভিলাই এবং দুর্গ শহর দুটির মধ্যে অবস্থিত। যার একদিকে ইস্পাত এবং অন্যদিকে সিমেন্ট কারখানা। ফলত, মধ্যবর্তী এই অঞ্চলে ক্রমশ বেড়ে চলেছে কার্বনের মাত্রা। পরিবেশের ভারসাম্য পাশাপাশি শুকিয়ে আসছে ভূগর্ভস্থ জলের আধারও। কৃত্রিম অরণ্য তৈরি করা সম্ভব হলে সেই সমস্যার সমাধান মিলবে বলেই অভিমত পরিবেশকর্মীদের।

তবে ২৫০০ একর জমিতে বনসৃজন তো আর মুখের কথা নয়। তাই গোটা প্রকল্পটিকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছে ছত্তিশগড় বন দপ্তর। প্রথম পাঁচ বছরে বৃক্ষরোপণ করা হবে ৮৮৫ একর জমিতে। এই পর্যায়ে দুর্গ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নন্দিনী খনিকে ঘিরেই রোপণ করা হবে মহুয়া, পিপুল, বট, অশ্বত্থের মতো দীর্ঘায়ু গাছ। পরবর্তী স্তরে বসানো হবে ছোট ও মাঝারি গুল্ম, বনজ এবং ক্যানোপি প্রজাতির গাছ। যে সমস্ত অঞ্চলে সরাসরি বৃক্ষরোপণ সম্ভব নয়। সেখানে জাপানি উদ্ভিদবিদ মিয়াওয়াকির পদ্ধতিতে বীজ ছড়ানো হবে বলে জানাচ্ছেন ছত্তিশগড়ের বন বিভাগের আধিকারিকরা। 

নন্দিনী অঞ্চলটি মূলত জলাভূমি অঞ্চল। ফলে, বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলার রসদ এমনিতেই মজুত সেখানে। পাশাপাশি বনভূমি গড়ে তুলতে পারলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বিল স্টর্ক, হুইসলিং ডাক-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের। জীবন ফিরে পাবে হারিয়ে যাওয়া বাস্তুতন্ত্র। সব মিলিয়ে গোটা পরিকল্পনার জন্য প্রাথমিকভাবে ৩.৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ছত্তিশগড় সরকার। এই দশকের শেষেই শেষ হবে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। পরিকল্পনা সফল হলে আফ্রিকার আদলে মুক্ত সাফারি পার্কও তৈরি করা হবে সেখানে। 

আরও পড়ুন
হারিয়ে-যাওয়া অরণ্যে নতুন করে প্রাণসঞ্চার, পথ দেখাচ্ছে তেলেঙ্গানা

এখনও পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম মানবসৃষ্ট বনভূমি হিসাবে বিবেচিত হয় আসামের মলাই অরণ্যকে। যার আয়তন ১৩০০ একর। ছত্তিরগড়ের এই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এবার সেই রেকর্ডকেও ছাপিয়ে যাবে নন্দিনী…

আরও পড়ুন
দীর্ঘ ৪১ বছর অরণ্যবাস, ভিয়েতনামের ‘টারজান’ জানেন না নারীজাতির অস্তিত্ব সম্পর্কেও!

Powered by Froala Editor