৯০-এর দশকের শুরুর দিক সেটা। আসামের তেজপুর থেকে এসে দিল্লির খানপুরে বসবাস শুরু করেছিলেন তিনি। বেছে নিয়েছিলেন অটোচালকের পেশাকে। লাভ যে মন্দ হত, তেমন নয়। তবে অর্থের লোভেই পা দেওয়া অপরাধ জগতে। প্রথমে অটোচালনার সঙ্গে সুযোগ বুঝে গাড়ি চুরি করতেন দিল্লিতে। পরে সেটাই পেশা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর।
কথা হচ্ছে অনিল চৌহানকে (Anil Chauhan) নিয়ে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছেন দেশের সবচেয়ে বড়ো গাড়ি চুরির (Car Theif) এই মাফিয়া। গত আগস্ট মাসের ২৩ তারিখে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন দিল্লির দেশবন্ধু রোড থানার আওতাধীন স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ। চোরাই মোটরসাইকেল-সহ কার্তুজ, পিস্তলও উদ্ধার হয় তাঁর কাছ থেকে। পাওয়া যায় বেশ কিছু চুরি করা গাড়ির জাল নথিও। গত ২৩ আগস্ট তাঁর ঠাঁই হয় শ্রীঘরে। তারপর থেকেই তদন্তে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে এক একটি রহস্য। কোনো সিনেমার প্রেক্ষাপটের থেকে যা কম নয় কোনো অংশেই।
১৯৯৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সবমিলিয়ে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি গাড়ি চুরির মামলায় নাম রয়েছে অনিল চৌহানের। তবে বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি বলেই ধারণা তদন্তকারীদের। দিল্লি, আসাম-সহ ভারতের একাধিক রাজ্যেই ছড়িয়ে ছিল তাঁর অপরাধের জাল। দেশের এক প্রান্ত থেকে গাড়ি চুরি করে অন্য প্রান্তে পাঠিয়ে দিতেন অনিল চৌহান। শুধু তাই নয়। তাঁর এই ব্যবসা ছিল আন্তর্জাতিক। ভারতের বাইরে নেপালেও ছিল তাঁর রমরমা। রীতিমতো বিমানে চেপে গাড়ি চুরি করতে যেতেন অনিল। তদন্তে উঠে আসা তথ্য বলছে, বিমানে করে নেপালে গিয়ে সেখান থেকে গাড়ি চুরি করে সড়ক পথে ভারতে প্রবেশ করতেন তিনি।
এখানেই শেষ নয়। গণ্ডারের শিং পাচার, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বড়োসড় ব্যবসাও ছিল তাঁর। রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও। ফলে, আড়াই দশকে সম্পত্তির পাহাড় তৈরি করতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি অনিলের। এখনও পর্যন্ত ইডির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর বাড়ি। যার মধ্যে একটি বাড়ির মূল্যই প্রায় ১০ কোটি। তাছাড়াও কোটি কোটির সম্পত্তি তো রয়েছেই।
সবমিলিয়ে প্রায় ১৮১টি মামলা ঝুলছে অনিল চৌহানের নামে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় এতদিন পুলিশ-প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কীভাবে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেন তিনি? তদন্তে উঠে আসছে প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রী ও প্রশাসনের আধিকারিকদের নাম। একাধিক ক্ষমতাশালী হেভিওয়েটের সঙ্গে যোগসূত্র ছিল অনিলের। সেই সম্পর্ককেও নিজের সুবিধার জন্য ব্যবহার করতেন তিনি। আসামে সরকারি ঠিকাদারির কাজও পেয়েছিলেন দেশের সবচেয়ে বড়ো গাড়ি চোর।
এর আগে ২০১৫ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল আসাম পুলিশ। ৫ বছর জেল খেটে ২০২০ সালে ছাড়া পেয়েছিলেন অনিল। তারপর আবার পুরো দমে শুরু করেন তাঁর ব্যবসা। পুলিশের র্যাডারের বাইরে চলে যান তিনি। সম্প্রতি দিল্লিতে অবৈধ অস্ত্রের রমরমা বাড়ায়, জোরদার করা হয়েছিল প্রশাসনিক ব্যবস্থা। আর সেই সূত্র ধরেই ধরা পড়েন তিনি। তাঁর এই কর্মকাণ্ড যেন নতুন এক প্যান্ডোরার বাক্স খুলে ধরল দেশের সামনে…
Powered by Froala Editor