বেশ কয়েক বছর আগের কথা। অভিনয়জগতে জড়িয়ে ছিলেন তাঁর বোন এবং পরিচিত কিছু বন্ধু-বান্ধব। সেসময় দুপুর বেলায় বোনকে খাবার পৌঁছে দিতে যেতেন তিনি। নিজের বোনের অভিনয় দেখেই মুগ্ধ হতেন তিনি। ইচ্ছে হত, বিনোদনের এই জগতটাতে ঢুকে পড়তে। তবে সাহস পেতেন না তেমন। তিনি যে সমকামী। এতএব, স্বাভাবিক কথা বলতে গেলেও কটূক্তির শিকার হতে হবে তাঁকে। বেঞ্জামিন ডাইমারি। ভারতের প্রথম স্বঘোষিত সমকামী অভিনেতা তিনি। এবার জাতীয় পুরস্কারের পালক জুড়ল তাঁর মুকুটে।
প্রকাশ দেকা’র সিনেমা ‘জোনাকি পোরুয়া’ সিনেমায় দেখা দিয়েছিল আসামের অভিনেতা বেঞ্জামিনকে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল সিনেমাটি। সেখানে এক রূপান্তরকামী ‘জাহ্নু’-র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই চরিত্রটিই এনে দিল জাতীয় পুরস্কার। গত ২২ মার্চ ৬৭তম ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে বিচারকদের বিশেষ পছন্দের তালিকায় স্থান পেলেন বেঞ্জামিন।
তবে খুব কিছু সহজ ছিল না এই যাত্রাপথটা। অভিনয়ে আসার আগে সজ্জা-শিল্পী এবং কোরিওগ্রাফারের কাজ করেছেন তিনি। পরে বোনকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই অভিনয়-জগতে প্রবেশ। গুয়াহাটিতে থিয়েটারের একটি ওয়ার্কশপ করেছিলেন বেঞ্জামিন। সেখান থেকেই পথ চলার শুরু। সেটা ২০১৪ সাল। প্রথমে মঞ্চে অভিনয়। তারপর সিনেমা। এখনও পর্যন্ত দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
তবে এই একুশ শতকে এসেও যে এতটুকু পাল্টায়নি মানুষের মানসিকতা, প্রতিক্ষেত্রেই তার প্রমাণ পেয়েছেন বেঞ্জামিন। আসামের গোরেশ্বরে নিজের পাড়ায় তো বটেই, পরবর্তীতে মুম্বাইয়ের মতো জায়গায় বিভিন্ন সিনেমার সেটে অপমানিত হয়ে হয়েছে তাঁকে। সমকামী হওয়ার জন্য উড়ে এসেছে কুরুচিকর মন্তব্য। কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে হেনস্থা করা হত তাঁকে।
আরও পড়ুন
সমপ্রেমের সিনেমা, সমকামী অভিনেতাকে নিয়েই ‘বাজিমাত’ হলিউডের
তবে এসবের মধ্যেও বিন্দুমাত্র বিচলিত নন বছর ছাব্বিশের অভিনেতা। বিশ্বাস, আগামী দিনে অভিনয়ের মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতাকে গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন তিনি। লক্ষ্য সেটাই। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন পরবর্তীতে তাঁকে রূপান্তরকামী, মহিলা, পুরুষ— সব চরিত্রেই অভিনয় করতে দেখা যাবে পর্দায়। অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজের সত্তা ভুলে মূল চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তোলাই আসল কাজ বলে মনে করেন বেঞ্জামিন। বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ মতো করেই দেখছেন তিনি। বৈষম্যের বেড়াজাল ভাঙতে এখন তাঁর হাতিয়ার এই সামাজিক ‘বৈষম্য’-ই…
Powered by Froala Editor