কথায় বলে, বাঙালি বাঁচে নস্টালজিয়ায়। সে কোনও ব্যক্তিমানুষকে নিয়েই হোক, বা কোনও জিনিস। মাঝেই মাঝেই শোনা যায় ‘আহা! সেই দিনগুলো কেমন ছিল!’ সেরকমই একটি নস্টালজিয়া হল ফাউন্টেন পেন। অবশ্য আগে কেন, এখনও অনেকে আঁকড়ে ধরে থাকেন এই পেন। সে ব্যবহারেই হোক, অথবা সংগ্রহে রাখতে। তবে এই কাহিনি ঝর্ণা কলমের নয়, সুলেখা কালির। একটা সময় ভারতে ফাউন্টেন পেনের কালির জগতে একচ্ছত্র নাম ছিল এটি।
সালটা ১৯৩৪। দেশ তখন ফুটছে স্বাধীনতার জন্য। ব্রিটিশদের তৈরি জিনিস বয়কট করার ডাক আগেই দিয়েছিলেন নেতারা। তখনও জারি ছিল সেটা। সেই সময়ই দুই ভাই গান্ধীজির সঙ্গে যোগ দিলেন আন্দোলনে। ননীগোপাল এবং শঙ্করাচার্য মৈত্র। গান্ধীজির অনুপ্রেরণাতেই স্বদেশি জিনিস তৈরির ব্যবসায় যুক্ত হন এই দুই ভাই। শুরু হয় ‘সুলেখা’র। ভারতের প্রথম নিজস্ব পেনের কালি তৈরির প্রতিষ্ঠান। রমরমিয়ে বাড়তে থাকল সুলেখা কালি। ফাউন্টেন পেনের সঙ্গে ক্রমশ জমে উঠল এর জুটি। ব্রিটিশদের সঙ্গে অসহযোগিতার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠল এই প্রতিষ্ঠান। হাজারেরও বেশি শেয়ারহোল্ডার তৈরি হল সুলেখার। তৈরি হল এক কিংবদন্তির।
কিন্তু খারাপ সময় আসে সবার। সুলেখারও এল সেই দিন। ১৯৬০-এর পর ক্রমশ খারাপ হতে থাকে অবস্থা। তারপর, ১৯৮০ সালে বন্ধ হয়ে যায় সুলেখা। ঋণভারে জর্জরিত কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, পণ করে রইলেন তাঁরা। একদিন না একদিন ঠিকই ফিরবেন। আর ফিরলেনও। ২০০৬ সালের নভেম্বরে ফিরে এল সুলেখা। তবে এবার শুধু কালি নয়, সঙ্গে থাকল নানা স্টেশনারি জিনিসপত্র। থাকল সোলার প্যানেলও। লাভের মুখ দেখতে সময় লাগল না। ২০১১ থেকে ব্যবসা বাড়তে লাগল। আবারও জনপ্রিয় হল সুলেখা। আর আজও, স্বমহিমায় চলছে এই প্রতিষ্ঠান। ফিরে আসার গল্প বোধহয় এমনই হয়!