বায়ুদূষণ প্রতিকারে পথ দেখাচ্ছেন মুম্বাইয়ের স্কুলছুট প্রযুক্তিবিদ

জলবায়ু পরিবর্তন এবং বায়ুদূষণ নিয়ে চিন্তিত গোটা বিশ্ব। কিন্তু দূষণ প্রতিকারে কি আদৌ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন বিশ্বের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রনেতারা? বরং, উল্টে কার্বন নির্গমনের হার বেড়ে চলেছে নিত্যদিন। দূষণের মাত্রা না কমলে, সামগ্রিকভাবে কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে দূষক পদার্থদের সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। তবে কি এই বিষময় পরিবেশেই বাঁচতে হবে মানুষকে? না, এবার দূষণমুক্তির অভিনব পন্থা দেখালেন ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ। তৈরি করে ফেললেন ফিলটারহীন এয়ার বায়ু পরিশোধক (Filterless Air Purifier)।

অঙ্গদ দারিয়ানি (Angad Daryani)। ২৩ বছর বয়সী মুম্বাইয়ের এই তরুণ প্রযুক্তিবিদ এবং তাঁর তৈরি সংস্থা ‘প্রাণ’ (PRAN) দূষণমুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাচ্ছে মানব সভ্যতাকে। তবে দূষণমুক্ত বলা ভুল হবে খানিক। বরং, অঙ্গদের প্রযুক্তি দূষণের মধ্যেও সহাবস্থানের পথ দেখাচ্ছে। ঠিক বোধগম্য হল না নিশ্চয়ই বিষয়টা? 

মহামারীর সময় বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের সময় একাধিকবার উঠে এসেছে ‘বায়ো বাবল’-এর কথা। মহামারী নিয়ন্ত্রণে না এলেও, কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলকে সংক্রমণমুক্ত করেই তৈরি করা হয় এই ‘বায়ো বাবল’। অঙ্গদের প্রযুক্তি কাজ করবে অনেকটা এই ‘বায়ো বাবল’-এর মতোই। প্রযুক্তির ভাষায় যাকে বলে ‘ব্রিদিং বাবল’। অর্থাৎ, সামগ্রিক বায়ুমণ্ডল নয়, অঙ্গদের এই বায়ু পরিশোধক কাজ করবে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের মধ্যে। শোষণ করবে সেখানকার বায়ুতে উপস্থিত সমস্তরকমের দূষিত গ্যাস এবং ধূলিকণা। ফলে, অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে বায়ুদূষণজনিত শ্বাসরোগের প্রকোপ। 

মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্কুল জীবনে ইতি টানেন অঙ্গদ। স্কুলছুট হওয়ার পর বাড়িতেই চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। তা সত্ত্বেও বুদ্ধিমত্তা এবং উদ্ভাবনীর জেরে বিশ্বজয় করেন মুম্বাইয়ের তরুণ। জায়গা করে নেন ম্যাসাচুসেট বিশ্ববিদ্যালয়, আর্মহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়, জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির মতো খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আজ থেকে বছর কয়েক আগে ম্যাসাচুসেটে পাঠ্যরত অবস্থাতেই প্রযুক্তি সংস্থা ‘প্রাণ’-এর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। 

আরও পড়ুন
হাইড্রোজেন জ্বালানিতে চলবে বাস, ভারতে এই প্রথম

অবশ্য বায়ু পরিশোধক নিয়ে তাঁর কাজ শুরু হয় বছর তিনেক আগে থেকে। অঙ্গদ খোদ নিজেই শিকার বায়ুদূষণের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে ফেরার পরেই অ্যাজমায় আক্রান্ত হন তিনি। বায়ু পরিশোধক তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু তারপরই। আর এই পরিশোধক তৈরিতে থ্রি-ডি টেকনোলজিকেই কাজে লাগান তিনি। প্রায় সাড়ে তিন বছরের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত সফল হয় তাঁর ফিল্টারহীন পরিশোধক তৈরির প্রকল্প। 

আরও পড়ুন
‘রিয়েল এস্টেট’ দ্বীপে সংরক্ষিত অরণ্য কানাডার বৃদ্ধের

অঙ্গদের মতে স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্র এবং বাণিজ্যিক অঞ্চলে ব্যবহার করা যেতে পারে এই বিশেষ এয়ার পিউরিফায়ার। তাতে পরিপার্শ্বের বায়ুর মান পরিবর্তন না হলেও, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দূষণমুক্ত পরিবেশ বা ‘এয়ার বাবল’ তৈরি হবে। যা পারতপক্ষে কমিয়ে আনবে দূষণজনিত শ্বাসরোগের প্রকোপ। ইতিমধ্যেই বাজারে চলে এসেছে ‘প্রাণ’-এর এই অভিনব প্রযুক্তি। ভারত সরকারের কাছেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার জন্য দ্বারস্থ হয়েছেন অঙ্গদ। এখন দেখার কত দ্রুত তার ব্যবহারিক প্রয়োগ ‘সুস্থ’ করে তুলতে পারে মানব সভ্যতাকে…

আরও পড়ুন
মহাকাশে ফুড ডেলিভারি! কীর্তি জাপানের বিলিয়নেয়ারের

Powered by Froala Editor

Latest News See More