মাটি ছাড়াই চাষাবাদ, দিশা দেখালেন দুই ভারতীয়

চাষ-আবাদ ভারতের সংস্কৃতির চিরকালীন অঙ্গ। কৃষিকাজের কত পদ্ধতিই না আবিষ্কার হয়েছে এই দেশে। কিন্তু মাটি ছাড়া কৃষিকাজের ধারণা একেবারেই নতুন। কয়েক দশক ধরে ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলিতে অবশ্য হাইড্রোপনিক প্রযুক্তিতে গাছের পরিচর্যা শুরু হয়েছে। কিন্তু তাও ঘরের বারান্দার ছোটো বাগানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এবার সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই বৃহৎ পরিসরে শস্য উৎপাদনের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন দুই ভারতীয়। দিল্লির টেরি স্কুল অফ অ্যাডভান্স স্টাডির দুই গবেষক তৈরি করেছেন সৌরবিদ্যুৎ চালিত এই পদ্ধতি। ফলমূল, শাকসব্জির উৎপাদন তো সম্ভব বটেই, তবে গবেষকরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন গবাদি পশুর খাদ্য প্রস্তুতির ব্যাপারে।

চিরাচরিত কৃষিকাজের পাশাপাশি ভারত গবাদি পশুর চাষেও বিশ্বের প্রথম সারির দেশ। কিন্তু অনেক সময়েই এইসমস্ত পশুরা পুষ্টিকর খাবার পায় না। আর পশুর খাবারের যোগান দিতে অনেক সময়েই মানুষের জন্য চাষ করা শস্যের উচ্ছিষ্ট অংশ দিয়ে থাকেন প্রতিপালকরা। এই সমস্যার সমাধানের জন্য এগিয়ে এসেছেন সৌরদীপ বসাক এবং লবকেশ বালচন্দানি। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার পর ভারত সরকারের স্থায়ী চাকরি ছেড়ে আবারও গবেষণার জগতে ফিরে এসেছেন সৌরদীপ। এবার অবশ্য তাঁর বিষয় অচিরাচরিত শক্তি উৎস। বদলে যাওয়া জলবায়ুর সঙ্গে লড়াই করতে গেলে এই মুহূর্ত থেকেই অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারে জোর দেওয়া প্রয়োজন। আর তার জন্য প্রয়োজন আরও অনেকটা গবেষণা।

সৌরদীপ এবং লবকেশের এই আবিষ্কার সম্প্রতি এফিসিয়েন্সি ফর অ্যাক্সেস ডিজাইন চ্যালেঞ্জ প্রদর্শনীতে ব্রোঞ্জ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে। পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে সৌরদীপ এবং লবকেশের কথায় বারবার উঠে আসছিল দেশের কৃষকদের কথা। প্রতি বছর অন্তত ১০ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেন ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে। এই বিষয়ে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রয়োজন উন্নততর প্রযুক্তিও। সৌরদীপ এবং লবকেশের এই আবিষ্কার যে শুধুই মৃত্তিকাহীন কৃষিকাজের দিগন্ত খুলে দিল, তাই নয়। এই পদ্ধতিতে জলের প্রয়োজন হবে প্রথাগত পদ্ধতির মাত্র ৫ শতাংশ। আর একমাসের বিদ্যুতের খরচ পড়বে মাত্র ০.৫ ইউনিট। গবাদিপশুর খাদ্যের জন্য আর কিছুরই প্রয়োজন হবে না। অবশ্য শাকসব্জি চাষের ক্ষেত্রে চারাগাছের প্রয়োজন হবেই। ইতিমধ্যে সমগ্র প্রকল্পটির একটি বাণিজ্যিক মডেলও তৈরি করে ফেলেছেন গবেষকরা। আর তার দাম মাত্র ৭৫০০ টাকা। ব্যতিক্রমী এইসমস্ত আবিষ্কাররের ভিতর দিয়েই খুব তাড়াতাড়ি বদলে যেতে পারে দেশের সামগ্রিক চেহারা।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সুন্দরবনের লবণাক্ত মাটিও ধান চাষের উপযোগী, ভরসা দিচ্ছেন বাঙালি গবেষকরাই