ঘরের মধ্যে সুস্বাদু খাবার থাকলেই ইঁদুরের উৎপাত আমাদের বিব্রত করে। কিন্তু ইঁদুর কি সেসব খাবারের স্বাদ সঠিকভাবে বুঝেই সেগুলো খেতে আসে? নাহলে এমন অতর্কিত আক্রমণের কারণই বা কী? এই রহস্যের খোঁজ করতে গিয়েই এক অবাক করা আবিষ্কারের সাক্ষী থাকলেন বাঙালি বিজ্ঞানী দেবার্ঘ দত্ত বণিক। প্রাণীদের ঘ্রাণশক্তি বা দৃষ্টিশক্তি নিয়ে তো অনেক অবাক করা তথ্যই আমাদের জানা। এবার দেখা গেল ইঁদুরের স্বাদ-গ্রহণের অদ্ভুত ক্ষমতার নমুনা।
খাবারের কোনটা মিষ্টি, কোনটা তেতো আর কোনটা টক কিম্বা ঝাল; সবই ভালোই বুঝতে পারে ইঁদুর। শুধু নোনতাটাই যা পারে না। অর্থাৎ মানুষের জানা চারটি স্বাদের তিনটে এবং সেইসঙ্গে ঝালের অনুভূতি আছে ইঁদুরের। এতে অবশ্য আপাত আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় তার স্নায়ুতন্ত্রের আরও জটিল কর্মকাণ্ড। আমেরিকার ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের নিউরোফিজিওলজির অধ্যাপক দেবার্ঘ দত্ত বণিক ও তাঁর সহযোগীদের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ইঁদুরের স্বাদ-কোরকের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য। দেখা গিয়েছে মানুষের একেকটি স্বাদ-কোরক যেখানে একসঙ্গে একটি বা বড়জোর দুটি স্বাদ বুঝতে পারে, ইঁদুরের একটি স্বাদ-কোরক কিন্তু সেখানে একসঙ্গে তিনটি স্বাদই বুঝতে পারে।
তবে এখানেই আশ্চর্যের শেষ নয়। দেখা গিয়েছে স্বাদ-কোরকের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগের জন্য বিকল্প পদ্ধতিও আছে ইঁদুরের স্নায়ুতন্ত্রে। স্বাদ-গ্রহণের মূল নিউরো-প্রোটিন অকেজো করে দিলেও দেখা গিয়েছে দিব্যি বিভিন্ন স্বাদ চিনতে পারছে ইঁদুর। কিন্তু কীভাবে মস্তিষ্কের সঙ্গে তার যোগাযোগ রক্ষা করছে, তার হদিশ এখনও পাওয়া যায়নি। বাঙালি বিজ্ঞানীর এই গবেষণা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘প্লস জেনেটিক্স’ পত্রিকায়।
দেবার্ঘ দত্ত বণিক এই আবিষ্কার নিয়ে জানিয়েছেন, ইঁদুরের স্বাদ-গ্রহণের এক ধরনের স্নায়বিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানীদের জানা ছিল। কিন্তু সেইসব জানা স্বাদ-কোরক অকেজো করে দেওয়ার পরেও দেখা যায় ইঁদুর দিব্যি সমস্ত স্বাদ বুঝতে পারছে। তখনই শুরু হল গবেষণা। আর তারপরেই উঠে আসতে থাকল আশ্চর্য সব তথ্য। তবে এখনই এই গবেষণার কোনো ব্যবহারিক প্রয়োগ বোঝা না গেলেও ভবিষ্যতে চিকিৎসার কাজে এইসমস্ত তথ্য কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছেন দেবার্ঘ দত্ত বণিক। হয়তো কেমো-থেরাপি বা অন্য কোনো চিকিৎসার কারণে স্বাদ-গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা মানুষের ক্ষমতা আবার ফিরিয়ে আনতে পারে ইঁদুরের স্নায়ুতন্ত্রের অদ্ভুত প্রযুক্তিই।
Powered by Froala Editor