ভারতের মাটিতে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু ১৮৫৩ সালে। মুম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত। তবে পূর্ব ভারতে রেল চলাচল শুরু হতেও দেরি হয়নি। পরের বছরই হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে রেল চলাচল শুরু হয়। ১৮৫৪ সালের ১৫ আগস্ট। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে ১৬৭ বছর। তবে আজও সেই ইতিহাস চোখের সামনে দেখতে পাবেন। শুধু হাওড়া স্টেশন থেকে ফোরশোর রোডের দিকে হেঁটে যেতে হবে মিনিট দশেক। সেখানেই রয়েছে হাওড়া রেল জাদুঘর। প্রায় ৪.৫ একর জায়গার উপর তৈরি এক বিস্তীর্ণ সংগ্রহশালা। তবে সম্প্রতি রেল বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অর্থের প্রয়োজনে এই সংগ্রহশালার মাঝের হলটি ভাড়া দেওয়া হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য। এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্কও। অনেকেই মনে করছেন, লৌকিক অনুষ্ঠানের কারণে ঐতিহাসিক সামগ্রীর নানা রকমের ক্ষতি হতে পারে।
২০০৬ সালে পূর্বরেল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে তৈরি হয় হাওড়া রেল মিউজিয়াম। এর আগে গোপন ভল্টে সংরক্ষিত ছিল সমস্ত সামগ্রী। ১৫ বছর আগে প্রথম সেইসমস্ত সামগ্রী জনসমক্ষে আসে। পুরো জাদুঘরটি দেখতে ঠিক হাওড়া স্টেশনের একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। সংগ্রহশালার একদম সামনেই রয়েছে ‘হল অফ ফেম’। এখানে সাজানো রয়েছে ব্রডগেজ ও ন্যারোগেজ স্টিম ইঞ্জিনের বিভিন্ন মডেল। রয়েছে কাঠের তৈরি বিভিন্ন রেল কামরার মডেলও। এরপর সামনের দিকে এগোলেই বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। তার শুরুতেই রয়েছে একটি লম্বা রেল ট্র্যাক। আর তার চারধারে চারটি কিয়স্ক। একটির নাম ‘বিদ্যুৎ’, অপর তিনটি ‘দূরসঞ্চার’, ‘বিরাসত’ এবং ‘স্মৃতিয়াঁ’। বিদ্যুৎ নামের কিয়স্কটি জানায় পূর্বরেল বিভাগে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের ইতিহাস। সেইসঙ্গে বিদ্যুতের ব্যবহার কীভাবে রেলযাত্রাকে সহজ করে তুলেছে, তার বর্ণনাও পাওয়া যায় এই কিয়স্ক থেকে। দূরসঞ্চার কিয়স্ক থেকে জানা রেলের সঙ্গে সিগন্যাল ব্যবস্থার সম্পর্কের ইতিহাস। বিরাসত কিয়স্কে রয়েছে রেলগার্ড, টিকিট চেকার, ড্রাইভার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেল কর্মচারীদের মডেল। আর সবশেষে স্মৃতিয়াঁ কিয়স্কে গেলে দেখা মিলবে রেল স্ট্যাম্পের এক বিপুল সম্ভার। আর এই সমস্ত কিয়স্কের ডানদিকে রয়েছে ১৯১৭ সাল থেকে স্বাধীনতার সময় পর্যন্ত ব্যবহৃত নানা ইঞ্জিন, কামরা এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি।
একসময় মহাবিদ্রোহ দমনের জন্যই রেলপরিষেবার সার্বিক বিকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। তবে ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে তার ঐতিহ্যে যোগ হয়েছে বহু পালক। এমনকি বিপ্লবীরাও প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন রেল পরিষেবাকেই। সেই সমস্ত ইতিহাসের এক মানমন্দির হাওড়া রেল মিউজিয়াম। আর এই ইতিহাসকে রক্ষা করাও আমাদের সকলেই দায়িত্ব। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য যদি এই মিউজিয়াম ভাড়া দেওয়া হয়, তাহলে সংগ্রহশালার ক্ষতি হতে পারে যে-কোনো মুহূর্তে। রেলের আর্থিক ঘাটতি মেটানোর কি আর কোনো উপায় ছিল না? এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নেই কোনো প্রবেশ-প্রস্থান, মুহূর্তদের উপভোগ করতে শেখায় জাপানের এই রেলস্টেশন