শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যের ইতি, বন্ধ হতে চলেছে রেলের মুদ্রিত টাইমটেবিল

সামান্য একটা রেলের টাইম টেবিল, কতকিছুই না বলে দিতে পারে। শার্লক হোমস তো একাধিক রহস্যেরই সমাধান করে ফেলেছিলেন। ফেলুদার কাছে অবশ্য তার গুরুত্ব ছিল নতুন নতুন জায়গায় যাওয়ার তাগিদেই। যেভাবে আর পাঁচজন ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে রেলের টাইম টেবিল হয়ে উঠেছিল এক অপরিহার্য পঞ্জিকা। তবে এবার তার দিন শেষ। নতুন করে আর টাইম টেবিল ছাপানো হবে না, সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছে রেলওয়ে বোর্ড।

সাধারণত পূর্ববর্তী বছরের রেলের সময়সূচিকে মাথায় রেখেই প্রকাশিত হয় এই টাইম টেবিল। যার পোশাকি নাম ‘ট্রেনস অ্যাট আ গ্লান্স’। এতে বিভিন্ন আঞ্চলিক শাখার সমস্ত লোকাল, প্যাসেঞ্জার এবং এমইএমইউ রেলের পাশাপাশি থাকে জাতীয় স্তরের গুরুত্বপূর্ণ নানা ট্রেনের সময়সূচি। এই ‘ট্রেনস অ্যাট আ গ্লান্স’ ১৯৭৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হলেও রেলের টাইম টেবিলের ইতিহাস কিন্তু তার চেয়ে অনেক পুরনো। উনিশ শতকের শেষ দিক থেকেই ব্রিটিশ রেল কোম্পানির আঞ্চলিক শাখাগুলি নিজেদের সময়সূচি বইয়ের আকারে প্রকাশ করা শুরু করে। এর মধ্যে লন্ডনে রেলওয়ে ব্র্যাডশ ছাপা শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানে সমস্ত বিভাগের ট্রেনের হকিকতই জানা যায়। দেখাদেখি ১৯২৭ সালে কলকাতায় রেলওয়ে ব্র্যাডশ ছাপা শুরু হয়। এরপর দীর্ঘদিন বাঙালি রেলের সময়সূচি বলতে এই ব্র্যাডশ-কেই বুঝত।

১৯৭৭ সালে ‘ট্রেনস অ্যাট আ গ্লান্স’ ছাপা শুরু হলেও কিন্তু ব্র্যাডশ-র জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। কিন্তু ৯০-এর দশক থেকে ঘনঘন রেলের সময়সূচি পরিবর্তিত হতে থাকলে ব্র্যাডশ সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে মানুষ রেলওয়ে বোর্ডের নিজস্ব সময়সূচির উপরেই আস্থা রাখতে শুরু করেন। একুশ শতকের গোড়ায় এসে ব্র্যাডশ ছাপা বন্ধ হয়ে যায়। আর এবার বন্ধ হতে চলেছে সেই রেলের নিজস্ব সময় সরণির প্রকাশও। এর জন্য প্রযুক্তিগত কারণকেই দায়ী করেছেন কর্তারা। তাঁদের মতে, রেলের সময় সরণির চাহিদা ক্রমশ কমছে। আজকাল মানুষ ইন্টারনেট প্রযুক্তির উপরেই বেশি পরিমাণে নির্ভরশীল। তাছাড়া কোনো সময়ের পরিবর্তন হলেও তা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া অনেক সহজ। ফলে ছাপা সময় সরণির বদলে রেল কর্তৃপক্ষও ডিজিটাল সময় সরণি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার নাম ঠিক করা হয়েছে ‘ডিজিটাল ট্রেনস অ্যাট আ গ্লান্স’।

একসময় রেলের সময় সরণির প্রায় প্রত্যেক পাতায় থাকত বিজ্ঞাপন। ভ্রমণপিপাসু মানুষ তাঁদের গন্তব্যের পাশাপাশি থাকা-খাওয়ায়ার ব্যবস্থাও খুঁজে নিতেন এই বই থেকেই। আজ সেই সমস্ত তথ্যই ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। ফলে রেলের সময় সরণি থেকে মুখ ফিরিয়েছেন বিজ্ঞাপনদাতারাও। এভাবে একটা ইতিহাসকে টিকিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছে রেলওয়ে বোর্ড। তবে এই সময় সরণির সঙ্গে যে জড়িয়ে আছে মানুষের নস্টালজিয়াও। তারও দিন শেষ হতে চলল।

আরও পড়ুন
৫৫ বছর পর ফের চালু আন্তর্জাতিক হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলপথ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
রাজপথ দিয়েই ছুটত রেলগাড়ি! কোথায় হারিয়ে গেল কলকাতার ‘ধাপা মেল’?