যতদূর দেখা যায় শুধু বরফ আর বরফ। তুষারাবৃত এই শীতল মরুভূমিতে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া এক কথায় অসম্ভব। কিন্তু একেবারেই কি নিষ্প্রাণ পৃথিবীর মেরুপ্রদেশ? না। বহু শৈবাল, ছত্রাক এবং অণুজীবের দেখা মেলে আন্টার্কটিকার চরম আবহাওয়াতে। এবার সেখানেই এক নতুন প্রজাতির মস-এর সন্ধান দিলেন এক ভারতীয় গবেষক।
পাঞ্জাব কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার প্রধান অধ্যাপক এবং গবেষক ডঃ ফেলিক্স বাস্টের দৌলতেই সামনে এল এই মসের অস্তিত্ব। খানিকটা আকস্মিকই ছিল এই আবিষ্কার। ২০১৬ সালে ভারতের আন্টার্কটিকা মিশনের সদস্য হিসাবে দক্ষিণ মেরু অভিযানে গিয়েছিলেন ফেলিক্স। সেখানেই ভারতীয় ক্যাম্পের কাছে এই উদ্ভিদ প্রজাতি খুঁজে পান তিনি। ধবধবে সাদা বরফের ওপরেই যেন সবুজ চাদরের আস্তরণ।
সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে শুরু ডিএনএ পরীক্ষা করেন তিনি। আর তারপরেই নিশ্চিত হয়ে যায় তাঁর সন্দেহ। হ্যাঁ, এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি মসের প্রজাতি। কিন্তু মেরুপ্রদেশে এহেন উদ্ভিদের অস্তিত্ব এর আগে কখনো চোখে পড়েনি গবেষকদের। তার কারণ হয়তো ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এই উদ্ভিদের রং। ফেলিক্স জানাচ্ছেন, শীতে যখন আন্টার্কটিকার তাপমাত্রা নেমে যায় ঋণাত্মক ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে। তখন শুকিয়ে যায় এই মস। বদলে যায় তার রঙ-ও। আবার গ্রীষ্মে বরফ গললে সবুজ হয়ে ওঠে এই উদ্ভিদ। এমনকি অন্যান্য শৈবালদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মসটি। এককথায় এটি আন্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম ধারক।
আন্টার্কটিকায় ভারতের অন্যতম স্টেশন তথা বাগদেবী সরস্বতীর নামানুসারে ফেলিক্স এই নতুন আবিষ্কারের নামকরণ করেছেন ‘ব্রায়াম ভারতীয়েনসিস’। ভারতীয় গবেষকের এই আবিষ্কারকে ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে বিজ্ঞান সংস্থা ‘এশিয়া-প্যাসিফিক বায়োডাইভার্সিটি’। কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশিত হতে চলেছে সেই গবেষণাপত্রও।
আরও পড়ুন
সুন্দরবনে নতুন অঙ্গুরিমাল প্রাণী আবিষ্কার প্রেসিডেন্সির গবেষকদের
১৯৮১ সালে প্রথমবারের জন্য আন্টার্কটিকায় পা রেখেছিল ভারত। তারপর পেরিয়ে গেছে ৪০ বছর। এর মধ্যে দক্ষিণ মেরুতে একাধিক ভারতীয় স্টেশন তৈরি হলেও, কোনো উদ্ভিদের সন্ধান দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ভারতীয় গবেষকরা। এইবার ‘ভারতী’ আবিষ্কারের দৌলতেই সেই খরা কাটল ভারতের। উদ্ভিদবিদ্যায় আন্তর্জাতিক গবেষণার ক্ষেত্রেও এই আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে চলেছে বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের…
আরও পড়ুন
সাপের খাদক মাকড়সা! তাজ্জব বিজ্ঞানীরাও
Powered by Froala Editor