বর্ধমানের মিহিদানা-সীতাভোগ এবার ডাকটিকিটেও

বর্ধমান শহরের কথা বললেই এসে যাবে মিহিদানা আর সীতাভোগের কথা। মিষ্টির শহর বর্ধমান, তবে তার খ্যাতি মূলত এই দুই মিষ্টান্নকে ঘিরেই। ২০১৭ সালে জিআই তকমা পায় বর্ধমানের সীতাভোগ এবং মিহিদানা। এবার আরও এক জাতীয় সম্মান পেল এই দুই মিষ্টি। ভারতের ডাকবিভাগের স্ট্যাম্পে এবার দেখা যাবে সীতাভোগ এবং মিহিদানার ছবি। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হল সেই কভারের।

সীতাভোগ ও মিহিদানার ইতিহাস বর্ধমান শহরের মতো প্রাচীন নয়। ১৯০৪ সালে, বঙ্গভঙ্গের ঠিক প্রাকমুহূর্তে প্রথম তৈরি হয়েছিল এই মিষ্টি। বর্ধমানের জমিদার তখন বিজয়চাঁদ রায় মহতাব। তাঁকে রাজা উপাধিতে ভূষিত করার জন্য শহরে আসবেন খোদ বড়লাট কার্জন। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতেই বিজয়চাঁদ তৈরি করেছেন বিরাট একটি গেট। কিন্তু আয়োজন যখন প্রায় শেষ, জমিদারের মনে হয় বড়োলাটকে মিষ্টিমুখ করানোর কথা। সঙ্গে সঙ্গে ডাক পড়ল মোদক ভৈরবচন্দ্র নাগের। তিনিই তৈরি করলেন দুটি নতুন ধরনের মিষ্টান্ন। একটি চালগুঁড়ো ও ছানার মিশ্রণকে রসে ফেলে বানানো সীতাভোগ। আর অন্যটি মতিচুরের পদ্ধতিকেই বদলে নিয়ে তৈরি মিহিদানা। মিষ্টি খেয়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন বড়োলাট যে, সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠানেও এই দুই মিষ্টি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন।

এরপর অবশ্য ইতিহাসে অনেককিছু ঘটে গিয়েছে। মহারাজা উপাধি পেয়েও স্বদেশিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন বিজয়চাঁদ। কিন্তু যা বদলায়নি তা হল মিহিদানা এবং সীতাভোগের জনপ্রিয়তা। ভারতীয় ডাকবিভাগের পক্ষ থেকে সেই জনপ্রিয়তাকেই তুলে ধরা হল এবার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণবঙ্গ রিজিয়নের পোস্ট মাস্টার জেনারেল শশী সালিনি কুজুর, বর্ধমান ডিভিশনের সিনিয়র সুপারিন্টেডেন্ট অফ পোস্ট সৈয়দ ফরজ হায়দার নবি, বর্ধমান সীতাভোগ-মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রমোদ কুমার সিং প্রমুখ।

শশী সালিনি জানান, ১৫০ বছরের ঐতিহ্যশালী ভারতীয় ডাক বিভাগ দেশের নানা প্রান্তের ইতিহাসকেই ধরে রাখার চেষ্টা করে ডাকটিকিটের মাধ্যমে। সীতাভোগ এবং মিহিদানাও বর্ধমানের ইতিহাসের গৌরবময় অংশ। এর জনপ্রিয়তা ইতিমধ্যেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। তবু যাঁরা এখনও সীতাভোগ এবং মিহিদানার সঙ্গে পরিচিত নন, তাঁরাও জানতে পারবেন এই ডাকটিকিট থেকে। বর্ধমান শহরের নাম এতে আরও উজ্জ্বল হবে, সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন
জিআই তকমার পথে নদিয়ার সরভাজা ও সরপুরিয়া

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জিআই তকমা পেতে চলেছে বাংলার কালো-নুনিয়া ধান, অন্তিম স্বীকৃতির অপেক্ষা