ভারতীয় বংশোদ্ভূতের পাশেই উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ, বৈচিত্র্যের সমাহার নিউজিল্যান্ডের মন্ত্রিসভায়

সাদা চামড়ার মানুষদের সঙ্গেই মন্ত্রিত্বের জন্য শপথ নিতে উঠলেন এক উপজাতি সম্প্রদায়ের মহিলা। তাঁর ঠোঁটের নিচে আঁকা বিশেষ এক ধরনের উল্কি। নিউজিল্যান্ডের মানুষ ভালোভাবেই চেনেন সেই উল্কি। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় ‘মোকো কাউই’। মাউরি উপজাতির মানুষরা বংশানুক্রমে এই উল্কি বহন করে চলেছেন। যে উপজাতির মানুষদের আজও সামাজিকভাবে বয়কট করে চলেন অনেক তথাকথিত সভ্য মানুষ। সোমবার নিউজিল্যান্ডের নতুন মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তাই নানাইয়া মাহুতাকে দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। অবাক হয়েছেন রাধাকৃষ্ণন এবং গ্রান্ট রবার্টসনকে দেখেও। একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, আর অন্যজন ঘোষিত সমকামী। সব মিলিয়ে সত্যিই বিস্ময়কর বৈচিত্র্য দেখা গেল নিউজিল্যান্ডের মন্ত্রিসভায়।

প্রত্যাশা ছিল আগেই। আর সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আবারও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন জাকিন্ডা আর্ডার্ন। ইতিমধ্যে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন সারা বিশ্বের সামনে। প্রথমদিকে ভাইরাসের সংক্রমণ নিউজিল্যান্ডেও যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল। কিন্তু পরিকল্পিত লকডাউন, মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি আর চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটিয়ে দেখিয়ে দিলেন জাকিন্ডা। নিউজিল্যান্ড এখন করোনামুক্ত দেশগুলির একটি। সেদেশের মানুষও যোগ্য সম্মান দিয়েছেন জাকিন্ডাকে। ফলে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হলেন তিনি। অবশ্য জয়লাভের পরেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, আরও চমক অপেক্ষা করছে। আর সেই চমক এল সোমবার।

সোমবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ঘোষিত হয় বাকি মন্ত্রীদের নাম। আর সেখানে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন রবার্টসন। ইতিমধ্যে সমকামীদের অধিকারের দাবিতে তাঁর প্রচার সারা পৃথিবীর নজর কেড়েছে। যদিও তাঁর সেই পরিচয়ের থেকেও অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক দক্ষতাকেই, এমনটাই জানিয়েছেন জাকিন্ডা। সেইসঙ্গে এই প্রথম মন্ত্রিসভায় দেখা গেল কোনো ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে। ৪১ বছরের রাধাকৃষ্ণন সেদেশের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব নিলেন। আর অবশ্যই বলতে হয় নানাইয়া মাহুতার কথা। যে মাউরি উপজাতিকে ডাকাত বলে দাগিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে আজও, সেই সমাজেরই একজন প্রতিনিধি কাঁধে তুলে নিলেন বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব। আসলে শুধু করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়, এই বহুধা বিভক্ত সমাজের বিভেদকামী মানসিকতার বিরুদ্ধেই যে তাঁর প্রকৃত লড়াই, সে-কথাই প্রমাণ করে দিলেন জাকিন্ডা।

Powered by Froala Editor