বয়স মাত্র ৩৪ বছর। রাষ্ট্রপুঞ্জের অডিটর হিসাবে কাজ করছেন ৪ বছর ধরে। কিন্তু সম্প্রতি সেই কাজ থেকে বিরতি নিয়েছেন। কেন? কারণ তাঁর জীবনের কাছে প্রত্যাশা আরও অনেক বেশি। ম্যানেজমেন্টের কোনো অভিজ্ঞতা না থাক, সরাসরি তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সচিবের দায়িত্ব পালন করতে চান! আর ১৭ ফেব্রুয়ারি এই মর্মে মনোনয়নও দাখিল করেছেন। তিনি, ভারতীয় বংশোদ্ভূত অরোরা আকাঙ্ক্ষা।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ইতিহাসে এমন ঘটনা সত্যিই অভূতপূর্ব। সাধারণ সচিবের পদকে সকলেই সমীহ করে চলেন। সেখানে একজন সাধারণ কর্মচারীর ‘স্পর্ধা’য় অবাক সকলেই। চলতি বছরেই নির্বাচন। আর সেখানে অরোরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিগত ৫ বছর ধরে সাধারণ সচিবের দায়িত্বে থাকা অ্যান্টোনিও গুতারেসের সঙ্গে। অনেকেই ঠাট্টা করছেন। বিদ্রূপ কখনও কখনও শালীনতার সীমাও ছাড়াচ্ছে। তবুও হাল ছাড়তে রাজি নন অরোরা।
গুতারেসের ব্যক্তিগত সহকারী তো সাংবাদিকদের সামনে সরাসরি বলেই দিয়েছেন, কোনো অযোগ্য ব্যক্তির স্পর্ধা নিয়ে মন্তব্য করতে তিনি রাজি নন। তবে এই বক্তব্যটুকুও একটি মন্তব্য বৈকি! অরোরা ইতিমধ্যেই তাঁর প্রচারকার্যের জন্য তৈরি করে ফেলেছেন একটি ওয়েবসাইট। বাকি প্রতিদ্বন্দ্বীরা যখন নানা দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সন্ধি স্থাপনে ব্যস্ত, অরোরা আকাঙ্ক্ষা তখন সময় দিচ্ছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচারে। অথচ তাঁরা কেউই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। রাষ্ট্রনায়কদের সমর্থন না পেলে তাঁর নির্বাচনে জেতা যে অসম্ভব, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে অরোরা আকাঙ্ক্ষা নিজের যোগ্যতার ব্যাপারে একেবারেই সন্দিহান নন। ভাবছেন নিশ্চয়ই, কী সেই যোগ্যতা? নেতৃত্বের পদে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতাই তো তাঁর নেই। তবে তিনি শরণার্থী পরিবারের সন্তান। আর এই পরিচয়কেই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাপকাঠি করে তুলতে চান অরোরা। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসতে হয় তাঁর পরিবারকে। অরোরা আকাঙ্ক্ষা নিজে অবশ্য দেশভাগের সাক্ষী থাকেননি। কিন্তু তিনি জানেন শরণার্থীদের কী ধরণের সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আর সারা পৃথিবীতেই তো এখন শরণার্থী সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সচিব হিসাবে তিনি নিজেকেই সবচেয়ে যোগ্য বলে মনে করছেন।
আরও পড়ুন
এক কামরার ফ্ল্যাটে বসেই ‘পার্সিভারেন্স’ পরিচালনা করছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অধ্যাপক
পাশাপাশি অরোরা প্রশ্ন তুলছেন জাতিসংঘের এতদিনের কাজের রীতি নিয়েও। তাঁর মতে, অডিটের কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন আলোচনা, সম্মেলন এবং চুক্তির নামে কত কোটি কোটি অর্থ খরচ হয়ে যায়। মানুষের প্রয়োজনে লাগে না কিছুই। এমনকি উগান্ডায় কাজ করতে গিয়ে যে মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে, সে-কথাও জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে। উগান্ডায় একটি শিশুকে তিনি দেখেছেন খাবারের অভাবে মাটি মুখে দিতে। আর এই অভিজ্ঞতা যখন তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের বলতে গেলেন, তাঁরা প্রায় পাত্তাই দেননি। কেউ আবার হেসে বলেছেন, মাটিতে তো আয়রন থাকে! রাষ্ট্রপুঞ্জের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, আর্থিক দুর্নীতি এবং পারস্পরিক পৃষ্ঠপোষকতায় বিরক্ত অরোরা আকাঙ্ক্ষা।
না, রাজনীতির ময়দানে কোনোদিন দেখা যায়নি তাঁকে। বরং নিজের ব্যক্তিগত জীবন এবং ফ্যাশান নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন অরোরা আকাঙ্ক্ষা। ৪ বছর রাষ্ট্রপুঞ্জে কাজের অভিজ্ঞতাই তাঁকে বিদ্রোহী করে তুলেছে। হেরে যাওয়ার আশঙ্কা কি নেই? তখন কি আবার একজন সাধারণ অডিট কর্মচারী হয়ে কাজে যোগ দিতে পারবেন? অরোরার স্পষ্ট উত্তর, শরণার্থীদের জীবনে কোনো দ্বিতীয় পরিকল্পনা থাকে না। তিনিও তাই ভাবছেন না, হেরে গেলে কী করবেন। তবে সত্যিই যদি অসম্ভব সম্ভব হয়, নির্বাচনে জয়ী হন অরোরা আকাঙ্ক্ষা, তাহলে নিঃসন্দেহে এক ইতিহাস তৈরি হবে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সচিব পদে প্রথম কোনো মহিলা শপথ নেবেন। ২০১৬ সালেও যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সব মিলিয়ে অরোরা আকাঙ্ক্ষার এই মনোনয়ন অবহেলার বিষয় নয় বলেই মনে করছেন নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনেকে।
আরও পড়ুন
মঙ্গলের বুকে নাসার রোভার, নিয়ন্ত্রণে ভারতীয় বিজ্ঞানীর তৈরি সফটওয়ার
Powered by Froala Editor