Powered by Froala Editor
শুধু ‘মন্দার’-ই নয়, ভারতীয় চলচ্চিত্রে একাধিকবার ছায়া ফেলেছে ম্যাকবেথ
১/১০
সেনাপতি থেকে সোজা রাজ-সিংহাসনের অধিকার— এই পদোন্নতি কে না চায়? কিন্তু সেই পথ খুব একটা সহজও নয়। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাই তাঁকে প্ররোচিত করেছিল স্কটিস রাজ ডানকানকে হত্যা করায়। লোভ, প্রতিহিংসার সঙ্গেই জড়িয়ে ছিল প্রেম এবং অলৌকিক ভবিষ্যদ্বাণীর দ্বৈতসংঘাত। শেষ অবধি উচ্চাকাঙ্ক্ষাই পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ সেনাপতির। হ্যাঁ, শেক্সপিয়ারের (Shakespeare) কালজয়ী ‘ম্যাকবেথ’-এর (Macbeth) কথাই হচ্ছে।
২/১০
সম্প্রতি, ‘মন্দার’-নেশায় (Mandaar) মেতেছে বাংলার সিনেজগৎ। অনির্বাণ ভট্টাচার্যের পরিচালিত প্রথম ওয়েব সিরিজে শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথই ফিরেছে মন্দার হয়ে। বদলেছে চরিত্ররা। কিন্তু সেই একই রয়েছে গল্পের প্রেক্ষাপট। দ্বন্দ্ব, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, হিংসা-প্রতিহিংসার গল্পই আবর্তিত হয়েছে এই ওয়েব সিরিজের গল্পজুড়ে।
৩/১০
তবে এই প্রথম নয়। ভারতীয় সিনে-দুনিয়ায় এর আগেও একাধিকবার ফিরে ফিরে এসেছে শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ। ভিন্ন ভিন্ন পরিচালক তাঁদের নিজস্ব আঙ্গিকে দেখেছেন কালজয়ী এই ট্র্যাজেডিকে। সেই তালিকাও বেশ দীর্ঘ। এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক, ম্যাকবেথের অনুকরণে তৈরি সেইসব চলচ্চিত্রের।
৪/১০
মর্মযোগী— পরিচালক কে. রামনথের তৈরি এই তামিল ছবিই সম্ভবত প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র যা নির্মিত হয়েছিল ম্যাকবেথের গল্প অবলম্বনে। ১৯৫১ সালে মুক্তি পেয়েছিল মর্মযোগী। হ্যাঁ, এই ট্র্যাজেডিতেও প্রতিফলিত হয়েছে প্রেম এবং প্রতিহিংসা। খোদ রানিই তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেন প্রতাপশালী রাজা মর্মযোগীকে। তবে ক্ষমতায় বসলেও, ভাগ্যের পরিহাস শেষ পর্যন্ত টেনে হিঁচড়ে সিংহাসন চ্যুত করে তাঁকে।
৫/১০
মকবুল— ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রও নির্মিত ম্যাকবেথের অনুকরণে। অনেকটা মর্মযোগীর আঙ্গিকেই তৈরি হয়েছিল মকবুল। পঙ্কজ কাপুর, নাসিরুদ্দিন শাহ, ইরফান খান, ওম পুরি’র মতো দক্ষ সিনেতারকাদের দেখা গিয়েছিল সেলুলয়েড স্ক্রিনে। পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজের তৈরি এই সিনেমা বাণিজ্যিক দিক থেকে সাফল্য না পেলেও, অভিনয় ও পরিচালনায় ল্যান্ডমার্ক হয়ে রয়ে গেছে ভারতীয় চলচ্চিত্রজগতে।
৬/১০
বিরাম— মর্মযোগীর মতোই ২০১৭ সালে নির্মিত ‘বিরাম’ দক্ষিণী সিনেমা। কালারিপাট্টু যোদ্ধা চান্দু’র গল্পবুননে তামিল পরিচালক শিবা শরণাপন্ন হয়েছিলেন শেক্সপিয়ারেরই। ম্যাকবেথের সঙ্গে এই গল্পের চিত্রনাট্যের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ‘দ্য অ্যাংসিয়েন্ট ব্যালাডস অফ নর্থ মালাবার’-ও। তামিল সিনেমা হওয়ায় সারা ভারতে সেই অর্থে জনপ্রিয়তা পায়নি বিরাম। তবে ৪৩ কোটির বাজেট নিয়ে বক্সঅফিসে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ কামিয়েছিল দক্ষিণী সিনেমাটি।
৭/১০
জোজি— চলতি বছরের শুরুতেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আমাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছিল জোজি। দীনেশ পোঠানের নির্দেশিত এই চলচ্চিত্রেও আবর্তিত হয়েছে ম্যাকবেথ। তবে এই গল্পে কোনো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নেই। বরং, ট্রাজেডি-কিং জোজি একজন ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রপ আউট। মহামারী কবলিত কেরলের দৃশ্য যেন আরও সমসাময়িক করে তুলেছে এই চলচ্চিত্রকে।
৮/১০
মায়া— না, এখনও প্রকাশ পায়নি এই চলচ্চিত্র। চলছে নির্মাণ কাজ। অনির্বাণের ‘মন্দার’-এর পর ফের ‘ম্যাকবেথ’-কে রুপোলি পর্দায় আনতে চলেছে রাজর্ষি দে’র পরিচালিত এই চলচ্চিত্র। চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়েছে শ্যুটিং-এর কাজ। রয়েছেন ১৯ জন খ্যাতনামা টলি-তারকা। পৃথিবীর সর্বকালীন সেরা ট্র্যাজেডির আদলে তৈরি ‘মায়া’ কতটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারবে ‘মন্দার’-কে। এখন সেটাই দেখার…
৯/১০
ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ায় প্রায় দু’-আড়াইশো বছর আগেই ইংরাজি সাহিত্য তার প্রভাব ছড়িয়েছিল গোটা ভারতে। আর বাংলা ছিল তাঁর প্রাণকেন্দ্র। ধীরে ধীরে বাংলার নবজাগরণের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন শেক্সপিয়ার। ভারতে কালজয়ী ট্র্যাজেডি ‘ম্যাকবেথ’-এর প্রথম অনুবাদ করেছিলেন এক বাঙালিই। হ্যাঁ, গিরীশ ঘোষ। উনিশ শতকের শেষে নগেন্দ্রনাথ বসুর কলমেও ‘কর্ণবীর’ হয়ে ধরা দিয়েছিল ম্যাকবেথ।
১০/১০
বাঙালি তো বটেই, ভারতের ম্যাকবেথ-চর্চায় সেই অধ্যায় আজও যে থিতু হয়নি, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ ‘জোজি’ এবং ‘মন্দার’। ১৬১১ সালে রচিত এই ট্র্যাজেডি আজও সমানভাবেই প্রাসঙ্গিক হয়ে রয়ে গেছে পরিচালক, লেখক, দর্শক এবং পাঠকদের কাছে। পেয়েছে অমরত্ব…