ভাবতে অবাক লাগে, এই ভারতবর্ষের জঙ্গলেই একসময় বন্দুক হাতে ঘুরে বেড়াতেন জিম করবেট। এমনকি স্বাধীনতার পরেও ইউরোপ থেকে বহু শিকারি আসতেন ভারতে। আর তাঁদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল লেপার্ড বা চিতাবাঘ। ভারতে এই প্রাণীটির বেশ কিছু প্রজাতি এখনও টিকে আছে। তবে কতদিন টিকে থাকবে সেকথা বলা মুশকিল। কারণ দেশের জঙ্গল যেমন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে, সেইসঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে চিতাবাঘও। আর গত ২০০ বছরে এই সংখ্যাটা কমেছে প্রায় ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ। এমনটাই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য।
ভারতের বন্যপ্রাণী গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক সম্রাট মণ্ডল ২০১৫ সাল থেকে চিতাবাঘের প্রজাতির উপর গবেষণা করে চলেছেন। আর সম্প্রতি সেই গবেষণার খসড়া প্রকাশিত হয়েছে। আর তাতে তিনি দেখিয়েছেন দেশের প্রতিটা অংশেই চিতাবাঘের পরিমাণ কমেছে যথেষ্ট পরিমাণে। তার মধ্যে তরাই অঞ্চলে সংকট সবথেকে বেশি। এখানে ৯০ শতাংশ চিতাবাঘই হারিয়ে গিয়েছে। শিবালিক অঞ্চলে ৮০ শতাংশ কমেছে চিতাবাঘের সংখ্যা। দাক্ষিণাত্যের মালভূমিতেও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পশ্চিমঘাট পর্বত অঞ্চলে পরিস্থিতি খানিকটা স্থিতিশীল হলেও, সেখানেও ৭৫ শতাংশ চিতাবাঘ হারিয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ সব দিক থেকেই সংকটে ভারতের এই নেটিভ প্রাণী।
তবে সাম্প্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক প্রাণীই বিলুপ্তির দিকে চলেছে। কিন্তু চিতাবাঘের বিলুপ্তির কারণ জলবায়ু পরিবর্তন নয়। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ চিতাবাঘ সাধারণত চরম সংকটপূর্ণ পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। কিন্তু পরিবেশ যাই হোক, সমস্ত প্রাণীরই তো বাসস্থান দরকার। চিতাবাঘ তো লোকালয়ে থাকতে পারে না। আর তাই জঙ্গল হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কমেছে চিতাবাঘের সংখ্যা। আর তার সঙ্গে তো চোরাশিকারের বিষয় আছেই। আর সব মিলিয়ে অধ্যাপক মণ্ডলের গবেষণা যদি ঠিক হয় তবে দুঃশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই মনে করছেন সমস্ত পরিবেশ বিশেষজ্ঞরাই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দাবি চামড়ার লোভে বিষ প্রয়োগে চিতাবাঘ হত্যা ছত্তিসগড়ে