পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই হারিয়ে যেতে পারে উত্তর ভারতের চিতাবাঘ!

পর্যটন শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংকট বাড়ছে বন্যপ্রাণীদের। কারণ আর কিছুই না, যে কোনো সময় চলন্ত গাড়ির তলায় চাপা পড়তে পারে তারা। সারা পৃথিবীতে এমন ঘটনার উদাহরণ নেহাৎ কম নয়। আর এই দুর্ঘটনার তালিকায় ভারতও পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে তেমনই ছবি। ‘গ্লোবাল ইকোলজি অ্যান্ড বায়োজিওগ্রাফি’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে পথদুর্ঘটনার কারণে (Road Kills) সংকটে রয়েছে অন্তত ১৫টি প্রাণী। এর মধ্যে ৪টি প্রজাতি বিশেষ করে বিলুপ্তির দোরগোড়ায়। আর তার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে উত্তর ভারতের চিতাবাঘের (Leopard) গোষ্ঠী।

গবেষকদের মতে, প্রতি বছর পথদুর্ঘটনায় যত সংখ্যক চিতাবাঘের মৃত্যু হয়, সেই সংখ্যা না কমলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে প্রজাতিটির অস্তিত্বই হারিয়ে যাবে। এই তালিকায় উত্তর ভারতের চিতাবাঘের পাশাপাশি রয়েছে ব্রাজিলের ম্যানড উলফ, লিটল স্পটেড ক্যাট এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রাউন হায়েনা। এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি পরিসংখ্যানের তুলনামূলক আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্তে এসেছেন গবেষকরা। এখানে প্রতি বছর দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানের পাশাপাশি দেখা হয়েছে বন্যপ্রাণী অধ্যুষিত অঞ্চলে রাস্তার মোট পরিমাণ, প্রাণী প্রজাতিগুলির ঘনত্ব, তাদের গড় আয়ু এবং গড় প্রজনন ক্ষমতা। দেখা গিয়েছে, একমাত্র উত্তর ভারতের চিতাবাঘের বিলুপ্তির আশঙ্কা ৮৩ শতাংশের বেশি। অন্য সমস্ত বন্যপ্রাণী গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেই এই আশঙ্কাটা ৭৫ শতাংশের কম।

রাজাজি ন্যাশনাল পার্ক এবং হরিদ্বার সংরক্ষিত অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি চিতাবাঘের মৃত্যু ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ পথদুর্ঘটনাই। তবে এখনই ভয় পাওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই, এমনটাই বলছেন গবেষকরা। এই পরিসংখ্যানও আসলে ভয় পাওয়ানোর উদ্দেশ্যে নয়, বরং পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরির উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে আগামীদিনে রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে সচেতন হওয়া যাবে, পাশাপাশি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে আন্ডারপাস ও ওভারপাস তৈরির প্রয়োজনীয়তাও বোঝা যাবে। প্রতিটি দেশের সরকারকে এই বিষয়ে সচেতন করাই গবেষণার উদ্দেশ্য। তবে এই আশঙ্কাকে গুরুত্ব না দিলে আগামীদিনে বড়ো বিপদের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মানুষ ও চিতাবাঘের সহাবস্থান সম্ভব, ভরসা যোগাচ্ছে পরিবেশ সংস্থা