এশিয়াটিক চিতার পর ভারতীয় ধূসর নেকড়ে, অবলুপ্তির প্রমাদ গুনছে প্রাচীনতম প্রজাতি

একটা সময় ডাচ, ব্রিটিশ, ড্যানিস কিংবা ফরাসি সাহেবদের কাছে ভারতের পরিচয় ছিল ‘সাপ এবং শ্বাপদের দেশ’। সেসময় বাঘ, এশিয়াটিক চিতা কিংবা নেকড়ের দলের সামনে প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে। তবে তার থেকেও বেশি মানুষের শিকার হয়েছে এইসকল বন্যপ্রাণীরা। শতাব্দী পেরিয়ে ভারতের বুক থেকে মুছে গেছে এশিয়াটিক চিতা। এবার বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে ইন্ডিয়ান গ্রে উলফ বা ভারতীয় ধূসর নেকড়ে-ও (Indian Gray Wolf)। 

সম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতীয় ভূখণ্ড বর্তমানে নেকড়ের সংখ্যা মাত্র ৩১০০টি। যেখানে ভারতে রয়েছে ২৯৬৭টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। তবে বাঘের সঙ্গে নেকড়ের প্রধান পার্থক্য, তারা সাধারণত দলবদ্ধভাবে থাকে। সেদিক থেকে দেখতে গেল, বাঘের থেকেও বেশি বিপন্ন হয়ে উঠেছে এই প্রাণীটি। এমনটাই অভিমত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু দ্রুতগতিতে নেকড়ের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ কী?

তার একটি কারণ শিকার। ঔপনিবেশিক সময়ে নির্বিচারে নেকড়ে শিকার চলত ভারতে। স্বাধীনতার পর সত্তরের দশকে শিকার নিষিদ্ধ করে ভারত সরকার। তবে তারপরেও নেকড়ের সংখ্যার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি কোনো। উল্টে বছর বছর কমেছে তাদের সংখ্যা। সেখানেই উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের মতোই বাসস্থানহীনতায় ভুগছে ভারতীয় ধূসর নেকড়ে। ক্রমাগত নগরায়নের জেরে বিলুপ্ত হতে বসেছে ভারতের নেটিভ প্রাণীটি। বাড়ছে সভ্যতার সঙ্গে সংঘাত। ফলে, অনেকক্ষেত্রেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে নেকড়ে। পথসারমেয়ের সঙ্গে তাদের মেটিং-এ জন্ম নিচ্ছে কুকুর-নেকড়ের সংকর। প্রভাব পড়ছে নেকড়ের জিনে। ফলে, আদতে সংখ্যাবৃদ্ধি বা বংশবিস্তার হচ্ছে না গ্রে উলফের। জুলজিক্যাল সার্ভের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের মোট ইকোলজিক্যাল জোনের মাত্র ৫ শতাংশ অঞ্চল সংরক্ষিত করা হয়েছে। তাতে অধিকাংশ জায়গাতেই প্রাধান্য পেয়েছে বাঘ, সিংহ, হাতি কিংবা গণ্ডারের মতো প্রাণী। নেকড়ে সংরক্ষণের জন্য সেইভাবে কোনো উদ্যোগই নেয়নি ভারত সরকার। 

অন্যদিকে ক্রমশ প্রকট হচ্ছে নেকড়েদের খাদ্য সমস্যাও। ইউরোপীয়, আমেরিকান কিংবা সাইবেরিয়ান নেকড়ের থেকে ভারতীয় নেকড়েদের আয়তন অনেকটাই ছোটো। ফলে, বড়ো আয়তনের প্রাণী শিকারে অক্ষম ভারতীয় নেকড়ের দল। সাধারণত তাদের খিদে মেটায় ছোটো আকৃতির হরিণ ও অন্যান্য গবাদি পশুরা। হরিণের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় ধীরে ধীরে দেখা দিচ্ছে খাদ্যসংকট। 

আরও পড়ুন
দিঘা এবং কেরলে আবিষ্কৃত হল নতুন প্রজাতির ঈল

প্রাণী বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই চিতার পর ভারত থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে যাবে নেকড়ের অস্তিত্বও। কিন্তু কিছুই কি করার নেই? সরকারের সচেতন পদক্ষেপ এবং সংরক্ষণ প্রকল্পই অবলুপ্তির মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে এই প্রজাতিকে। প্রয়োজন কৃত্রিমভাবে প্রজননের বন্দোবস্তও করতে হবে নেকড়ের, জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ভারতীয় নেকড়েকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম নেকড়ে প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এখন দেখার এই প্রাচীনতম প্রজাতিটির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে প্রশাসন আদৌ কোনো উদ্যোগ নেয় কিনা…

আরও পড়ুন
মানুষ ছাড়াও হাসতে অভ্যস্ত ৬৫টি প্রজাতির প্রাণী! জানাচ্ছে গবেষণা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
শুধু মানুষই নয়, অন্য প্রজাতিকে বিলুপ্তিতে ঠেলে দেয় এই 'ভারতীয়'রাও!

More From Author See More