জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেশি। তাই আজও ভারতের নানা প্রান্তে সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে ফেরিওয়ালারা তাঁদের ভ্যানগাড়ি চালান কয়লা ইঞ্জিনের সাহায্যেই। আর এর ফলে দূষণের মাত্রাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অন্যদিকে জ্বালানি তেলও কোনো সমাধান হতে পারে না। তাও দূষণমুক্ত নয়। এই সমস্যরা সমাধানে এবার পথ দেখাচ্ছে তামিলনাড়ুর ১৪ বছরের কিশোরী বিনিশা উমাশঙ্কর (Vinisha Umashankar)। বছর দুয়েক আগেই সে তৈরি করে ফেলেছে সম্পূর্ণ সৌরশক্তি নির্ভর ভ্যানগাড়ি (Solar Cart)। আর এই আবিষ্কারের কারণেই এবার ডিউক অফ কেমব্রিজ প্রিন্স উইলিয়ামসের আর্থশট প্রাইজের (Earthshot Prize) এর দৌড়েও নাম উঠল তার।
ক্রমাগত পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে যখন পৃথিবীর কোনো দেশেই সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে না, তখন স্কুলপড়ুয়ারাই পথে নেমেছে বারবার। কিন্তু বিনিশা বুঝেছিল, শুধু রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করাই কোনো পথ হতে পারে না। বরং এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সবাইকে। মাত্র ১২ বছর বয়সেই সে তাই শুরু করে দিয়েছিল নিজের কাজ। ছোটো থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিকে আগ্রহ বিনিশার। ৫ বছরের জন্মদিনে উপহার হিসাবে একটি ব্রিটানিকার এনসাইক্লোপেডিয়া পেয়েছিল বিনিশা। আর সেই থেকেই প্রযুক্তির নানা বিষয় তাকে আকর্ষণ করে। সৌরশক্তি যে এই সময়ে একটি উপযুক্ত সমাধান হতে পারে, তাই নিয়ে আলোচনা হয় নানা জায়গাতেই। কিন্তু তাকে হাতেকলমে কাজে লাগানোর উদ্যোগ খুবই কম।
ভারতে অন্তত ১০ লক্ষ ফেরিওয়ালা প্রতিদিন কয়লাচালিত ভ্যানগাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়। পরিবেশে দূষণ ছড়ানোর পাশাপাশি বিক্রেতাদেরও শারীরিক ক্ষতি হয় এই ধোঁয়ায়। কিন্তু তাদের সামনে এতদিন কোনো উপায় ছিল না। সেই দরজাটাই খুলে দিয়েছে বিনিশা। তার তৈরি ভ্যানগাড়ি ৫ ঘণ্টা সূর্যালোক পেলে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে। এর ফলে প্রায় বিনা খরচেই দীর্ঘ পথ যাওয়া সম্ভব হয় বিক্রেতাদের। ফলে পরিবেশ ও নিজেদের সুরক্ষার পাশাপাশি খরচও কমে অনেকটাই। এই ২ বছরে তামিলনাড়ুর অনেক বিক্রেতাই বিনিশার তৈরি ভ্যানগাড়ি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। ক্রমশ ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও এই ভ্যান পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিনিশার। আর এই বয়সেই এমন উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাতে এগিয়ে এসেছেন ডিউক অফ কেমব্রিজও। প্রায় ১ মিলিয়ন ইউরো পুরস্কারমূল্যের আর্থশট পুরস্কারের সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী বিনিশা। এমনকি দৌড়ে সে বাকিদের থেকে খানিকটা এগিয়ে আছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামীদিনে পরিবেশ সমস্যার সমাধানে আরও গবেষণার স্বপ্ন দেখে বিনিশা। তার কথায়, সব বয়সেই নতুন কিছু করা সম্ভব। আর তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে এলে তবেই সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
Powered by Froala Editor