আমেরিকান হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে ভারতের পরিবেশ-ঐতিহাসিক

সম্প্রতি আমেরিকান হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রকাশিত হল ২০২১ সালের যাবতীয় পুরস্কারের তালিকা। আর সেই তালিকায় রয়েছেন ভারতীয় পরিবেশ-ঐতিহাসিক মহেশ রঙ্গরাজন। বহু পুরস্কার ও সম্মানের মধ্যে কেবল একটিমাত্র বিভাগ রয়েছে আমেরিকার বাইরের ঐতিহাসিকদের জন্য। সংস্থার সাম্মানিক বিদেশি সদস্য হিসাবে এবার নির্বাচিত হলেন অধ্যাপক রঙ্গরাজন (Mahesh Rangarajan)। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা এবং বহু মার্কিন ঐতিহাসিকের গবেষণায় সাহায্য করার জন্যই এই সম্মান পেলেন তিনিই।

১৮৮৫ সাল থেকেই প্রতি বছর আমেরিকার বাইরের কোনো একজন ঐতিহাসিককে সম্মান জানিয়ে আসছে সংস্থা। ১৯৫৪ সালে যদুনাথ সরকার প্রথম ভারতীয় হিসাবে সেখানে জায়গা পান। পরে রোমিলা থাপার এবং রামচন্দ্র গুহকেও সম্মানিত করেছিল আমেরিকান হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। সেই তালিকায় এবার নাম উঠল কেরালার ক্রিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রঙ্গরাজনের। তবে তাঁর এই মনোনয়ন এক ব্যতিক্রমও বটে। প্রথাগত ইতিহাসচর্চার সাধারণ দিকগুলির বাইরে বেরিয়ে অধ্যাপক রঙ্গরাজন বেছে নিয়েছেন এক অন্য বিষয়। তাঁর গবেষণার মূল বিষয় প্রকৃতি এবং পরিবেশ। মানুষের ইতিহাস তো মানুষের একার নয়। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রকৃতির রূপান্তরও। আজকের পরিবেশ দূষণের সমস্যা এবং এর ভবিষ্যতকে বুঝতে গেলে তার ইতিহাসটাও বোঝা প্রয়োজন, এমনটাই মনে করেন তিনি। আর গবেষকদের পরিমণ্ডলের বাইরে গিয়ে এই ইতিহাস নিয়ে সাধারণ মানুষকেও সচেতন করতে চান রঙ্গরাজন। তাই অসংখ্য গবেষণাপত্রের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপযোগী করে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষাতেও বই লিখেছেন তিনি।

পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র এবং প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের সামাজিক ইতিহাস, জাতীয়তাবাদ, ঔপনিবেশিকতা সমস্তকিছুই জড়িয়ে। ঠিক যেমনভাবে ভারতে ব্রিটিশ শাসন এদেশের অরণ্যকেও বিপন্ন করেছে। আবার জমিদার শ্রেণির মানুষের আভিজাত্যের শিকার হতে হয়েছে বহু প্রাণীকে। পাশাপাশি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এবং সিংহের মতো প্রাণীগুলিকে শেষ মুহূর্তে সংরক্ষণের সময়ে কাজে লাগানো হয়েছে মানুষের জাত্যাভিমানকে। এমনই নানা বিষয় আমাদের জানা। কিন্তু এই পারস্পরিক ইতিহাসের যে দীর্ঘ শৃঙ্খল রয়েছে, তার খবর আমরা কতটুকুই বা রাখি? দিল্লি ইউনিভার্সিটি এবং অশোকা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনার সময় থেকেই এই সমস্ত বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন অধ্যাপক রঙ্গরাজন। আমেরিকান হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন থেকে স্বীকৃতি পাওয়ায় তাঁর মতো আরও অনেক গবেষকই এই কাজে এগিয়ে আসবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি। আর এভাবেই হয়তো বর্তমান সমস্যাগুলির সমাধানের রাস্তাও খুঁজে পাওয়া যাবে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জৈবজ্বালানিতেই উড়বে বিমান, পথ দেখালেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত গবেষক

More From Author See More