দিনটা ছিল ২০০০ সালের ১১ মে। ভোর ৫টা বেজে ৫ মিনিটে ভূমিষ্ঠ হন তিনি। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রীতিমতো হুলস্থূল পড়ে যায় গোটা ভারতজুড়ে। আস্থা অরোরা। তাঁর জন্মের মধ্যে দিয়েই জনসংখ্যায় ১০০ কোটির গণ্ডি পেরিয়েছিল ভারত। বর্তমানে ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে সচেনতনা গড়ে তুলতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ‘বিলিয়নতম নাগরিক’ হিসাবে পরিচিত আস্থাই।
দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির নাজাফগড়ের এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম আস্থার। তবে দেশের একশো কোটি-তম নাগরিক হওয়ায় নিজের অজান্তেই ‘সেলেব্রিটি’ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়িতে বসেছিল বেললাইন। লেগে থাকত নেতা-মন্ত্রীদের আনাগোনা। নিত্যদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হত তাঁদের কোনো না কোনো প্রতিশ্রুতির কথা। এমনকি জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের মাইকেল ভ্লাসফও শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন আস্থাকে। তৈরি হয়েছিল তাঁর জন্য ২ লক্ষ টাকার বিশেষ তহবিল।
তবে সময়ের প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গেই আস্থার কথা ভুলে গেছে ভারতের জনগণ। ম্লান হয়ে গেছে নেতা-মন্ত্রীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির পাহাড়ও। যত বয়স বেড়েছে, এই বৃহত্তর রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন তিনি। দিল্লির এক বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। সে-সময় স্কুলে কোনো বেতন দিতে হত না তাঁকে। আসলে আস্থার বেতন-মুকুবকে হাতিয়ার করেই প্রচারের আলোয় আসতে চেয়েছিলেন তাঁরা। পরবর্তীতে আস্থা ভারতীয় মিডিয়ার লাইম-লাইট থেকে সরে যাওয়ায় বেতন চাওয়া হয় তাঁর কাছ থেকে। ভালো নম্বর থাকা সত্ত্বেও, উচ্চ বেতন দিতে না পারায় মাধ্যমিক পাশ করার পর সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। সে-সময় ফিরেও তাকাননি রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা।
তা নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও, দেশের পরিকাঠামো বা রাজনীতিবিদদের দোষারোপ করেন না আস্থা। বরং, তাঁর অভিমত, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী ভারতের বিপুল জনসংখ্যা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্যই ক্রমশ প্রকট হচ্ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য, সংকট তৈরি হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদের। তাছাড়া বিপুল জনসংখ্যার কারণে প্রশাসনিক স্তরের পরিষেবাও যথেষ্ট ধীর গতিতে এগোয় ভারতে, এমনটাই মনে করেন ২২ বছর বয়সি নার্স আস্থা। সেইসঙ্গে ভারতের জনসংখ্যার তুলনায় যথেষ্ট কর্মক্ষেত্র বা শিক্ষার পরিকাঠামোও নেই বলেই অভিযোগ তাঁর।
বর্তমানে দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করার সঙ্গেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতের ‘বিলিয়নতম নাগরিক’। হাতিয়ার করে নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়াকেই। বৈষম্য এবং জনসংখ্যাবৃদ্ধির প্রবণতাকে রুখলে তবেই এগোবে দেশ, ফিরবে সাম্য। এমনটাই বিশ্বাস তাঁর। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৪৫ সালের মধ্যেই চিনকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়ে উঠবে ভারত। চলতি শতকের মধ্যেই ২০০ কোটিরও গণ্ডি পেরবে আমাদের দেশ। সে-সময় ‘দুই বিলিয়নতম শিশু’-কেও যেন তাঁর মতো একই সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করাই একমাত্র লক্ষ্য আস্থার…
Powered by Froala Editor