Powered by Froala Editor
চতুর্থ স্থানের ‘ফাঁড়া’— একটুর জন্য অলিম্পিকে পদক পাননি যেসব ভারতীয়
১/৯
স্বাধীন ভারতের প্রথম একক অলিম্পিক মেডেল এসে গিয়েছে ১৯৫২ সালেই। কিন্তু অলিম্পিক নিয়ে ভারতীয়দের প্রথম উন্মাদনা দেখা যায় ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকের সময়ে। আর এই উন্মাদনার নেপথ্যে ছিলেন যে মানুষটি, তিনি মিলখা সিং। না, তাঁর পরিচয় আজ আর নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। পরপর দুটি এশিয়ান গেমসের স্বর্ণপদকজয়ী ফ্লাইং সিং-কে অলিম্পিক পদকজয় থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল মাত্র ০.১ সেকেন্ডের জন্য।
২/৯
হ্যাঁ, মাত্র এতটুকু সময়ের ব্যবধানে ৪০০ মিটারের রেসে তাঁকে পিছনে ফেলে যান দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যালকম। মিলখাকে থামতে হল চতুর্থ স্থানে। রানিং ট্রাকে মাত্র একবার ঘাড় ফিরিয়েছিলেন মিলখা সিং। এই একটু ভুল না করলে তাঁকে ধরতে পারতেন না কেউই।
৩/৯
ভাগ্যের একই পরিহাস ফিরে আসে ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকেও। ভারতের ‘ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ড কুইন’ পিটি উষাকে ঘিরে পদকজয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন সকলেই। কিন্তু তাঁকেও থামতে হয় চতুর্থ স্থানে। তৃতীয় স্থানে থেকে ব্রোঞ্জ পদক পান মরোক্কর অ্যাথেলিট নাওয়াল মাতওয়াকাল। দুজনের সময়ের ব্যবধান ছিল মাত্র ০.০১ সেকেন্ড।
৪/৯
অলিম্পিকের পদক থেকে বঞ্চিত হলেও পিটি উষার খেলা মনজয় করে নিয়েছিল দেশবাসীর। খেলার মাঠে যে ভারতের মহিলারাও পিছিয়ে নেই, আন্তর্জাতিক স্তরে সে-কথা প্রমাণ করেছিলেন উষা।
৫/৯
২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিকের কাহিনিটা যেন একটু অন্যরকম। মিলখা সিং বা পিটি উষার মতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দিতে পারেননি কুঞ্জরানি দেবী। মণিপুরের এই ভারোত্তলক নক-আউট পর্ব পর্যন্ত যে কুশলতা দেখিয়েছেন, ফাইনালসে গিয়ে তা যেন খানিকটা হারিয়ে গেল।
৬/৯
৮২.৫ কেজি ভার তুলতে গিয়ে ধাক্কা খেলেন কুঞ্জরানি। আবার চেষ্টা করলেন। দ্বিতীয়বার ৮৫ কেজি তুলতে গিয়ে আবারও ব্যর্থ হলেন। যদিও শেষ কয়েকটি চেষ্টায় আবার ফিরে এলেন নিজের ছন্দে। কিন্তু পদকজয়ের সম্ভাবনা তখন আর নেই। তবে ভারতকে অলিম্পিক পদক উপহার দেওয়ার শপথ অক্ষরে অক্ষরে রেখেছেন কুঞ্জরানি। টোকিও অলিম্পিকের রৌপপদকজয়ী মীরাবাইয়ের প্রশিক্ষক তিনিই।
৭/৯
২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে আবারও সেই একই ছন্দপতন। বাংলার ছেলে জয়দীপ কর্মকারকে ঘিরে পদকজয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন সবাই। ফাইনালের শেষ শট পর্যন্ত সেই আশা হারিয়ে যায়নি। তখনও তিনি অলিম্পিক পদকের দাবিদার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে পড়তে হল তাঁকে। মাত্র ০.৯ পয়েন্টের জন্য চলে গেলেন চতুর্থ স্থানে। তবে শুধু অলিম্পিকে নয়, জয়দীপের নিখুঁত লক্ষ্যভেদ বারবার মুগ্ধ করেছে সকলকে।
৮/৯
এর ঠিক পরের অলিম্পিকে ভারতের প্রথম মহিলা জিমন্যাস্ট হিসাবে অলিম্পিকে নামলেন দীপা কর্মকার। তাঁর খেলায় মুগ্ধ সারা পৃথিবী। একের পর এক বাধা টপকে ফাইনালের আসরে দীপা। তখনও তাঁর খেলায় মুগ্ধ বিচারকরা। কিন্তু শেষ পর্বে মাটিতে পা রাখতে গিয়ে টলে গেলেন দীপা। আর মাত্র ০.১৫০ পয়েন্টের জন্য ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া হল। চতুর্থ স্থানে থেকেও দীপা কর্মকার মন জয় করে নিয়েছিলেন সকলের। খেলার দুনিয়ায় সাফল্য যে সবসময় পদকে মাপা যায় না।
৯/৯
টোকিও অলিম্পিকে এসেও একই ছন্দপতন ভারতীয়দের খেলায়। একদিকে যেমন একটুর জন্য ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া হল মহিলা হকি দলের, তেমনই পদকজয়ের দৌড়ে চতুর্থস্থানে ছিটকে গেলেন দীপক পুনিয়া। গলফে চতুর্থ স্থানে থামতে হল অদিতি অশোক-কেও। অবশ্য ইতিমধ্যে ৪টি ব্রোঞ্জ এবং ২টি রুপো এবং ১টি স্বর্ণপদক জয় করেছে ভারতীয় বাহিনী। সামনে আরও বেশ কিছু খেলা বাকি। হয়তো আবারও পদক আসবে ভারতে। বা হয়তো আবারও একটুর জন্য ছিটকে যাবেন ভারতের খেলোয়াড়রা। কিন্তু অলিম্পিকের মাঠে এই হার-না-মানা লড়াইয়ে দাম পদক দিয়ে মাপা যায় না। দেশভাগের ইতিহাস বুকে নিয়ে লড়াইয়ে নামা মিলখা সিং বা দারিদ্র্য এবং লিঙ্গবৈষম্যের শিকার পিটি উষা – একের পর এক ইতিহাস তৈরি করে চলছেন তাঁরাই।