সোমবার সকাল থেকেই কলকাতার আকাশে অবাক করা দৃশ্য চোখে পড়েছে অনেকের। ভারতীয় বায়ুসেনার বিশেষ হেলিকপ্টার পাক খেয়ে যাচ্ছে আকাশের বুকে। হঠাৎ এমন দৃশ্যে অনেকেই অবাক। তাহলে কি কোনো যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে? এমন জল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন একটা চিন্তা অমূলক নয়। তবে নতুন কোনো যুদ্ধ নয়, বরং আজ থেকে ৫০ বছর আগের একটি যুদ্ধের স্মৃতিতেই এই বিশেষ মহড়া বলে বায়ুসেনার তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাস ব্যাপী যুদ্ধ চলার পর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। আর সেই মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ লগ্নে জড়িয়ে পড়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনাও। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পেরিয়ে এসে সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতেই বিশেষ মহড়ার আয়োজন করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। গত ১২ ডিসেম্বর হিলিতে শহিদ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে সেই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে গিয়েছে। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর হিলি সীমান্তেই প্রথম ভারতীয় ও পাকিস্তানি বায়ুসেনার সংঘাত শুরু হয়। সেই সংঘর্ষে ৪০০ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হয়েছিলেন। তবে এর ৪ দিনের মধ্যেই একের পর এক সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত পাক বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ভারত।
বায়ুসেনার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সোম এবং মঙ্গলবার মহড়ার পর বুধবার সকালের ফোর্ট ইউলিয়ামে শহিদবেদীর উপর শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পন করা হবে। আর এই মহড়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে দমদম অসামরিক বিমান বন্দরকেই। যদিও এর ফলে যে অসামরিক বিমান চলাচলে কিছুটা অসুবিধা হবে, সেকথা স্বীকার করে নিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। যদিও সেপ্টেম্বর মাস থেকেই দমদম বিমানবন্দরে ভারতীয় বায়ুসেনার মহড়ার দৃশ্য দেখা গিয়েছে। কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অসামরিক বন্দরগুলিকে যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যায় কিনা, সেই পরীক্ষাই চলছে। সাধারণত অসামরিক বিমানের ক্ষেত্রে রানওয়ে সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকলে তবেই কোনো বিমান সেখানে অবতরণ করে। তবে সামরিক বিমানের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ছোট বিমানে সাফল্য মিলেছে। এবার বায়ুসেনার সবচেয়ে বড় বিমান সুখোই-৩০ পরীক্ষায় নেমেছে। মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে এই ৪টি সুখোই-৩০।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বায়ুসেনার জড়িয়ে পড়া কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। যুদ্ধের সময় প্রায় ১ কোটির বেশি শরণার্থী কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এত বড় শরণার্থী মিছিল পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনও দেখা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বায়ুসেনার ১৭ হাজারের বেশি সৈনিক শহিদ হয়েছিলেন। সব শেষে যে সাফল্য মিলেছিল, তা ভারতীয় উপমহাদেশের এক ঐতিহাসিক ঘটনা। সুবর্ণজয়ন্তীতে সেই ইতিহাসের উদযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকল শহর কলকাতাও।
আরও পড়ুন
কলকাতা বইমেলার প্রবেশদ্বারে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নকশা, চত্বরজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ঋত্বিক ঘটকের তথ্যচিত্র, দেখুন সেই দুষ্প্রাপ্য দলিল