ব্রিসবেনের মাঠ, যেখানে বিগত ৩২ বছর ধরে কোনো টেস্ট সিরিজ হারেনি অস্ট্রেলিয়া। আর সেখানেই এবার বিরাট জয় ছিনিয়ে আনল ভারতীয় বাহিনী। চাপ তো প্রথম থেকে ছিলই। এমনকি ব্যঙ্গ বিদ্রূপও কম শুনতে হয়নি। সমস্ত বিদ্রুপের উত্তর দিলেন খেলার ফলাফলেই। তিন উইকেটে জয়ী ভারতীয় বাহিনী। সেইসঙ্গে সিরিজও ছিনিয়ে নিল তাঁরা। সত্যিই এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকল জানুয়ারির ১৯ তারিখ, ২০২১।
প্রথম একাদশের অনেকেই শারীরিক অসুস্থতার জন্য মাঠে নামতে পারেননি। খেলা চালিয়ে নিয়ে গিয়েছেন দ্বিতীয় তালিকার খেলোয়াড়রাই। যাঁদের অনেকেই সেভাবে টেস্ট সিরিজে মাঠে নামেননি। শারীরিক চোট আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছিলেন তাঁরাও। সমালোচকদের অনেকেই ‘বি-টিম’ বলে কুৎসিত মন্তব্য করেছেন। সমালোচনা এসেছে দেশের মাটি থেকেও। কিন্তু এসবেও দমিয়ে রাখা যায়নি ভারতীয় খেলোয়াড়দের অপরাজেয় মানসিকতা।
ঠিক এক মাস আগে, প্রথম টেস্টে মাত্র ৩৬ রানে বিদায় নিয়েছিল ভারত। সমালোচনার ঝড় তখন সমস্তদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এত অল্প রানে কখনও বিদায় নেয়নি ভারত। তবে দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়ায় রাহানে বাহিনী। কারা ছিলেন সেই দলে? কেবল ঋষভ পান্থ নন; মহম্মদ সিরাজ, শুভমান গিল, নটরাজন, ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দূল ঠাকুরের মতো নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা। প্রায় প্রত্যেকেরই টেস্ট খেলার তেমন অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু তাও লড়াই থামায়নি 'টিম ইন্ডিয়া'। যদিও তৃতীয় টেস্টে অবস্থা আবার কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সেই অবস্থা থেকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং হনুমা বিহারীর অনবদ্য পার্টনারশিপ; হেরে যাওয়া ম্যাচ ড্র করল ভারত। আর তারপর, গাব্বা। অন্তিম জয় ছিনিয়ে নিল ভারতই। আর শেষ সময়ে ঋষভ পান্থের অসামান্য খেলা এখন সকলের কাছেই আলোচনার বিষয়। তিনিই এবারের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। অন্যদিকে ম্যান অফ দ্য সিরিজ অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স।
ছুটে এসেছে স্লেজিং, বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য। সমস্ত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের উত্তর দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোই যেন এই ভারতীয় দলের চিরকালের স্বভাব। বারবার এভাবেই নিজেদের প্রমাণ দিয়ে এসেছেন তাঁরা। মহম্মদ সিরাজদের বোলিংই বলুন, বা শুভমান গিলের ৯১ রানের ইনিংস, বা একের পর এক আঘাত খেয়েও চেতেশ্বর পূজারার মাটি কামড়ে পড়ে থাকা- এ যেন এক নতুন মহাকাব্য। ক্রিকেটের মাঠে ভারত রাজত্ব করেনি ঠিকই, কিন্তু এভাবেই বুক ঠুকে রুখে দাঁড়িয়েছে সবসময়। ঠিক তেমনই এক মুহূর্তের সাক্ষী থাকল আজকের ব্রিসবেন স্টেডিয়াম।
Powered by Froala Editor