ভূত্বক থেকে শুরু করে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে প্লাস্টিক দূষণের পরিধি। আর তা যে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বাস্তুতন্ত্রকে, তাতেও সন্দেহ নেই কোনো। কিন্তু তারপরেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না প্লাস্টিকের ব্যবহার। কারণ, দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জুড়ে গিয়েছে প্লাস্টিক। এবার এই দূষণ ঠেকাতেই অভিনব পন্থার হদিশ দিল ভারতীয় স্টার্ট আপ ‘থলি’ (Thaely)। পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে প্লাস্টিককে বদলে ফেলল জুতোয়।
এই অভিনব স্টার্ট আপের বয়স মাত্র চার মাস। চলতি বছরের জুলাই মাসের কথা। ২৩ বছর বয়সী তরুণ উদ্যোক্তা আশায় ভাভে-র নেতৃত্বে পথ চলা শুরু হয়েছিল ‘থলি’-র। তবে এই পরিকল্পনা আজকের নয়। বিবিএ পঠনপাঠনের সময়ই প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের নীল-নকশা তৈরি করে ফেলেছিলেন আশায়। ২০১৯ সালে তাঁর সেই পরিকল্পনা দুবাইতে ‘ইউরেকা কম্পিটিশন’-এও পুরস্কৃত হয়েছিল। তবে এমন একটা কর্মযজ্ঞে সময় তো লাগেই। ফলে, আরও বছর দুয়েকের অপেক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য।
এখনও পর্যন্ত মূলত স্নিকারসই বানাচ্ছে ভারতীয় সংস্থাটি। আশায় জানাচ্ছেন, জুতোপিছু পুনর্ব্যবহৃত হচ্ছে ১০টি প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং ১২টি বোতল। ‘ট্রায়োট্যাপ’ নামের একটি তৃতীয় সংস্থাই মূলত আবর্জনা বাছাই করে এই কাঁচামাল সরবরাহ করে ‘থলি’-কে। তারপর শুরু হয় প্লাস্টিকজাত বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ। তবে কোনোরকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না এই পদ্ধতিতে। কেবলমাত্র তাপ ও চাপ প্রয়োগ করেই তৈরি করা হয় পলিইথিলিন ফ্যাব্রিক। যা পরিচিত আরপিইটি নামে। সেই ফ্যাব্রিক দিয়েই প্রস্তুত হয় জুতো।
শুধু প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণই নয়, জুতোর সুকতলা থেকে শুরু করে ফিতে, এমনকি বাক্সও পুনর্ব্যবহৃত দ্রব্য দিয়েই তৈরি করছে এই সংস্থাটি। ব্যবহৃত রবার, কাগজ ও অন্যান্য নানান সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয় আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রগুলি। তবে সবথেকে চমকপ্রদ বিষয় হল, এই জুতোর বাক্স মাটিতে ফেললে, তা পরিণত হয় গাছের চারায়।
আরও পড়ুন
প্লাস্টিক দূষণ রোধ থেকে বৃক্ষরোপণ— হাজির রোবট
মাত্র মাস চারেকের মধ্যেই গোটা বিশ্বে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে আশায়ের এই উদ্যোগ। উৎপাদিত দ্রব্যের অধিকাংশটাই রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। এই মুহূর্তে থলি’র কর্মীসংখ্যা প্রায় ৭০ জন। প্রতি সপ্তাহে উৎপাদনের হার ১৫ হাজার। আন্তর্জাতিক সংস্থা স্ট্যাটিস্টার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, থলি’র মূল্য বর্তমানে ৭০ বিলিয়ন ডলার। ‘থলি’-তে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন উদ্যোগপতি আনন্দ মাহিন্দ্রাও।
আরও পড়ুন
কোভিডের কারণে লাফিয়ে বেড়েছে প্লাস্টিক দূষণ, শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা
সব মিলিয়ে শুধু পরিবেশগত দিক থেকেই নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে ভারতীয় এই স্টার্ট আপ। পাশাপাশি ভারতের মতো দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও নতুন দিশা দেখাচ্ছে আশায়ের সংস্থা। যাকে অভিনব বললেও বোধ হয় কম বলা হয়…
আরও পড়ুন
বর্জ্য প্লাস্টিকের সাহায্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন, দৃষ্টান্ত মধ্যপ্রদেশে
Powered by Froala Editor