অর্থনৈতিক পিরামিডের নিচের স্তরের মানুষেরা কেমন আছে, তার খবর রাখে না কেউই। কিন্তু লকডাউন ঘোষণার পরই সামনে এসেছিল সেই দুর্দশার ছবি। উপার্জন নেই, নেই খাওয়া-দাওয়ার বালাইও। মাইলের পর মাইল পথ হেঁটেই বাড়ি ফিরতে দেখা গিয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের। কিন্তু আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের অবস্থা তার আগেও খুব কিছু ভালো ছিল না দেশে। এবার সেই তথ্যই ফুটে উঠল জাতিসংঘের রিপোর্টে। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার সূচকে ১০৭ দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ৯৪। ভারতের অবস্থাকে ‘গুরুতর’ সংকটজনক হিসাবেই চিহ্নিত করেছে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স।
গত বছর ক্ষুধার সূচকে ১১৭ দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল ১০২। স্থানাঙ্কের নিরিখে খানিকটা উন্নত হয়েছে পরিস্থিতি তেমনটা মনে হলেও, বাস্তব ছবি একটু অন্যরকমই। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ (৭৫), পাকিস্তান (৮৮), শ্রীলঙ্কা (৬৪), মায়ানমার (৭৮), নেপাল (৭৩) সকলের থেকেই পিছিয়ে রয়েছে ভারত। একমাত্র আফগানিস্থানের (৯৯) পরিস্থিতি ভারতের থেকেও তলানিতে। তবে কোনো তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি ভুটান থেকে, এমনটাই জানিয়েছে জাতিসংঘ।
রিপোর্টে জানানো হয়েছে ১৪ শতাংশ ভারতীয় নাগরিকই অপুষ্টির আওতায়। যথেষ্ট আশঙ্কাজনক অবস্থা শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রেও। যার শতকরা হার ১৭.৩ শতাংশ। তবে গত বছরের তুলনায় (২০.১ শতাংশ) সামান্য উন্নতি হয়েছে এই হারে। মূলত কমেছে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার। যা একদিক থেকে খানিকটা স্বস্তি জোগালেও উদ্বেগ কাটছে না সার্বিক পরিসংখ্যানে।
রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সালের তথ্য অনুযায়ী ভারত-সহ বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান প্রভৃতি দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলিতে শিশুমৃত্যুর হার সর্বোচ্চ। তার কারণ হিসাবে উঠে আসছে সেই পুষ্টিরই অভাব। আর্থিক অস্বচ্ছলতা, খাবারের গুণগত মাণের কারণে অপুষ্টির শিকার হচ্ছেন প্রসূতিরা। অ্যানিমিয়া এবং অতিরিক্ত তামাকের ব্যবহারের কথাও উল্লেখিত হয়েছে রিপোর্টে।
২০২০-র ক্ষুধার সূচকের তালিকায় কোনো দেশই ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বিভাগে নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার চাদ, মাদাগাসকার এবং তিমর-লেস্টে এই তিন দেশ কেবল রয়েছে ‘উদ্বেগজনক’ বিভাগে। তবে লকডাউনের ফলে ভারত তো বটেই সব দেশেই ধাক্কা খেয়েছে অর্থনীতি। ফলে চলতি বছরে এই অবস্থা যে ভয়ঙ্কর রকমের চেহারা নিতে চলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। আসন্ন সেই পরিস্থিতির কথা ভেবেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে জাতিসঙ্ঘের...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ক্ষুধার্ত শিশুকে নির্যাতন-ধর্ষণ প্রতিবেশীর, অমানবিক ঘটনার সাক্ষী তামিলনাড়ু