কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের পরে চলতি বছরের শুরুর দিকেই ছাড়পত্র পেয়েছিল রাশিয়ার তৈরি কোভিড ভ্যাকসিন স্পুটনিক-ভি। এবার আরও একটি ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। জাইডাস ক্যাডিলারের তৈরি জাইকোভ-ডি চতুর্থ ভ্যাকসিন হিসাবে এবার আসতে চলেছে ভারতের বাজারে। ভারতে তৈরি এই ভ্যাকসিনকেই গেম চেঞ্জার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত বছর থেকেই এই ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিল আহমেদাবাদের সংস্থাটি। তবে বাজার চলতি অন্যান্য কোভিড ভ্যাকসিনের থেকে জাইকোভ-ডি চারিত্রিকভাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আধুনিকও বটে। কারণ, জাইকোভ-ডিই ভারত তথা গোটা বিশ্বের একমাত্র ডিএনএ কোভিড ভ্যাকসিন। ‘প্লাজমিড ডিএনএ’-র ওপর ভিত্তি করেই মূলত তৈরি হয়েছে এই ভ্যাকসিনটি। ‘ডিএনএ ভ্যাকসিনের একটা বড়ো সুবিধা হচ্ছে, মানবদেহে ঢোকার পর সেগুলো স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে পারে। এবং সেই স্পাইক প্রোটিনগুলোকে মডিউলেট করা যেতে পারে। যেকরমভাবে কোভিডের মিউটেশন হচ্ছে ঠিক সেভাবেই।’ জানালেন পিয়ারলেস হাসপাতালের ক্লিনিকাল ডায়রেক্টর অফ ক্লিনিকাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকাডেমি এবং ক্লিনিকাল ট্রায়াল বিশেষজ্ঞ ডঃ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক। ফলত, করোনাভাইরাসের ক্রমপরিবর্তনশীল চরিত্র বদলের সঙ্গে জুত করে উঠতে পারবে এই নতুন ভ্যাকসিনটি।
তবে শুধু তাই নয়, ভারতীয় পরিবেশের পক্ষেও বিশেষ ভাবে উপযোগী হয়ে উঠতে পারে জাইকোভ-ডি। ডঃ ভৌমিকের কথায়, ‘ডিএনএ ভ্যাকসিন অনেক স্টেবল। ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও রাখা যায়। যা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোল্ড স্টোরেজের চেন নষ্ট হয়ে গেলেও, আমরা সাধারণ আইস প্যাকের মাধ্যমেই আমরা এই ভ্যাকসিন স্থানান্তরিত করতে পারি।’
গেম চেঞ্জার এই ভ্যাকসিনের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে কলকাতাও। কারণ, কলকাতাতেই প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছিল ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল। রাজ্য ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ফেলিসিটর স্নেহেন্দু কোনার জানালেন, ‘আমরা ১২০০-র বেশি মানুষের উপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করেছি টিকাটি। এবং তাতে যথেষ্ট আশাপ্রদ ফলাফল এসেছিল।’
আরও পড়ুন
কোভিডজাত সাইটোকাইন স্টর্মের রহস্যভেদ কলকাতার গবেষকদের
তবে শুধু প্রাপ্তবয়স্করা নয়, ১২-১৮ বছর বয়সী শিশুদের ওপরেও সমানভাবে প্রয়োজযোগ্য এই ভ্যাকসিন। পাশাপাশি এই ভ্যাকসিন কোর্সের মধ্যে অন্তর্গত তিনটি ডোজ। ডঃ ভৌমিকের কথায়, ‘আমরা বেশ কিছুদিন ধরে তৃতীয় ডোজ অর্থাৎ বুস্টার ডোজের কথা বলছি। কিন্তু জাইকোভ-ডি-এর কোর্সে তিনটে ডোজই অন্তর্গত। ০, ২৮ ও ৫৬ দিনে তিনটি ডোজ দেওয়া হবে। ফলে অ্যান্টিবডি প্রোডাকশন অনেক ভালো হবে। আশা করা যায়, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বেশি হবে অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলোর থেকে।’
আরও পড়ুন
পরিযায়ী কর্মীরাই কোভিডযোদ্ধা, বাঙুরে মরণপণ লড়াই সহদেব-জহিরুলদের
আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকেই উৎপাদন শুরু হবে জাইকোভ-ডি’র। অক্টোবরের মধ্যেই ভারতের বাজারে এক কোটি ডোজ সরবরহ করার আশ্বাসও দিয়েছে আহমেদাবাদের সংস্থাটি। তবে এখনও পর্যন্ত টিকাটির দাম এখনও ঘোষণা করেনি সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। এখন দেখার, তিন ডোজের এই যুগান্তকারী টিকা কতটা বদলে দিতে পারে থার্ড ওয়েভের আবহ…
আরও পড়ুন
প্রয়াত কোভিডযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে বিশেষ মেমোরিয়াল নলবনে
Powered by Froala Editor