মিথেন নির্গমনে তৃতীয় ভারত, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রশাসন, কেন?

গত মাসেই গ্লাসগোতে আয়োজিত হয়েছিল জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন ‘কপ-২৬’। অংশ নিয়েছিল শতাধিক দেশ। বিশ্বব্যাপী মিথেন নির্গমনের (Methane Emission) পরিমাণ ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয় সেই সম্মেলনে। যা বাস্তবায়িত হলে, ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানো সম্ভব। কিন্তু মিথেন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে সঠিক কোনো পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ব্যর্থ ভারত (India)। এবার এমনটাই জানাল ‘দ্য থার্ড পোল’-এর আন্তর্জাতিক সমীক্ষা।

বিশ্বে মিথেন নির্গমনকারী দেশের তালিকায় চিন এবং রাশিয়ার পরে তৃতীয় স্থানেই রয়েছে ভারত। অথচ, অন্যান্য দেশের মতো মিথেন নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত বদল আনতে অর্থনৈতিক প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। সাধারণত, মিথেন নির্গমনের মূল ক্ষেত্র কৃষিকাজ এবং পশুপালন। যা ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ফলে, সরাসরি মিথেন নির্গমন আটকানোর পথ নেই। তবে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে নিয়ে আসতে পারে নির্গমনের মাত্রা। যার অন্যতম উদাহরণ জাপান। ১৯৯০ সাল থেকে ধান চাষের ক্ষেত্রে সার, জলের সরবরাহের পদ্ধতি এবং আরও বেশ কিছু বদল করে মিথেন নির্গমনে আশানুরূপ পরিবর্তন এনেছে জাপান। 

তবে ভারতে মোট মিথেন নির্গমনের মাত্র ১১ শতাংশের কারণ ধান উৎপাদন। অন্যদিকে প্রায় ৬৫ শতাংশ মিথেন তৈরি হয় পশুপালন থেকে। বিগত পাঁচ দশকে ভারতে মাংস, দুধ এবং ডিমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গবাদি পশু পালনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় চারগুণ। আগামীদিনে আরও দ্রুত বাড়তে পারে এই হার। ফলে ভারতে মিথেন নির্গমনের প্রবণতা ঠিক কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় গবেষকরা। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের থেকেও মিথের তাপশক্তি ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৮০ গুণ হওয়ায় ভারতের জলবায়ু পরিবর্তনেও ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে সেই পরিণতি। 

এই একই সমস্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে থাকলেও, সেখানে মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক এবং হরমোনের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ করা হয় মিথেনের পরিমাণ। কিন্তু এই পদ্ধতিকে আদর্শ হিসাবে গণ্য করতে নারাজ গবেষকদের একাংশ। পাশাপাশি ভারতীয় পরিবেশে এই বদল আনাও বেশ দুঃসাধ্য। বদলে পশুপালনের ক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রজনন এবং পশুদের সুষম খাদ্য সরবরাহকে জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেইরকম কোনো প্রকল্প নিতে আদৌ কি প্রস্তুত রাষ্ট্র? জানা নেই উত্তর…

Powered by Froala Editor