প্রথম দশে না থেকেও প্লাস্টিক দূষণে জর্জরিত ভারত

শহরের রাস্তার ধারে নিকাশি প্রণালী। যাবতীয় দূষিত জল বেরিয়ে যাওয়ার অথা সেখান দিয়েই। অথচ বাস্তবে সেই নিকাশি প্রণালী থেকেই জল উপচে পড়ে। কারণ আর কিছুই না, জল যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে প্লাস্টিকজাত বর্জ্যপদার্থ। ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটা শহরেই এই দৃশ্যটা অতি স্বাভাবিক। প্লাস্টিকের ব্যাগ বা ফাস্টফুডের প্যাকেট তো থাকেই। তার সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে ডিসপোজেবল মাস্ক, গ্লাভস এবং পিপিই। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে আরও অবাক করা তথ্য। সারা বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণের তালিকায় প্রথম সারিতে থাকা তো দূরের কথা, প্রথম ১০টি দেশের মধ্যেও নাম নেই ভারতের।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রচারের ফলে বিগত বেশ কিছু বছর ধরে প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব ক্রমশ কমেছে। বিগত ৫০ বছরে নাকি এই পরিমাণটা কমেছে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। তবে তার বাস্তব চেহারা উপলব্ধি করা সত্যিই কঠিন। এই ৫০ বছরেই আবার ভারতে জলজ প্রাণীর সংখ্যাও কমেছে ৭০ শতাংশ। আর তার প্রধান কারণ প্লাস্টিক দূষণ। তবে সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে যে দূষণ অনেকটাই বেড়েছে, সেকথা স্বীকার করে নিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রকও। গ্রিন ওয়েভ এনভারমেন্টাল সলিউশন নামের একটি এনজিও সম্প্রতি দক্ষিণের বেশ কিছু রাজ্যে প্লাস্টিক অপসারণের কাজ শুরু করেছে। আর সেখানে প্রায় প্রতিটা জলাভূমি অঞ্চল থেকেই উদ্ধার হয়েছে ১০০ কেজির বেশি প্লাস্টিক। এর বেশিরভাগটাই মাস্ক, পিপিই বা অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম।

তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ কারা ল্যাভেন্ডার ল একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছেন যে সারা পৃথিবীতে পরিবেশ দূষণে ভারত বা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির অবদান খুবই কম। বিজ্ঞান পত্রিকা ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে সেই সমীক্ষার রিপোর্ট। এখানে কিন্তু আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড সমস্ত দেশকে টেক্কা দিতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আমেরিকায় একজন মানুষ বছরে ১৫০ কেজি প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ফেলে দেন। ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে এই পরিমাণটা ৯৯ কেজি। ভারতে সেখানে পরিমাণটা ৩০ কেজিরও কম। অথচ প্লাস্টিক দূষণ আমাদের চারপাশের পরিবেশকে কীরকম বিষাক্ত করে তুলেছে, তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। তাহলে সারা পৃথিবীর অবস্থা কল্পনা করতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু যেভাবে প্লাস্টিকের সঙ্গে ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছি আমরা, তাতে কি সত্যিই অদূর ভবিষ্যতে সমস্যার থেকে মুক্তির কোনো সম্ভাবনা আছে?

Powered by Froala Editor

Latest News See More