হাইড্রোজেন জ্বালানিতে চলবে বাস, ভারতে এই প্রথম

পরিবেশ দূষণ এবং কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমাতে বিকল্প জ্বালানির অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল আগে থেকেই। সেই সূত্রে দৈনন্দিন জ্বালানির চাহিদা মেটাতে ‘হাইড্রোজেন ফুয়েল’ ব্যবহারের পথ দেখিয়েছিল মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। এবার সেই প্রযুক্তিতে কাজে লাগিয়েই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ‘হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল’-চালিত বাস (Hydrogen Fuel Cell Bus) তৈরি করে ফেলল ভারতীয় সংস্থা ‘সেন্টিয়েন্ট ল্যাবস’ (Sentient Labs)। 

প্রথম বিশ্বের দেশে এর আগেই চালু হয়েছিল এই বিশেষ প্রযুক্তির যানবাহন। তবে এই প্রথমবার ভারতে নির্মিত হল ‘হাইড্রোজেন ফুয়েল-সেল ভেহিকল’। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে এই বাসের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হবে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। ফলে, বিক্রিয়াজাত পদার্থ হিসাবে নির্গত হবে জল এবং তাপশক্তি। কার্বন-ডাই-অক্সাইড তো বটেই, কোনোরকম গ্রিন হাউস গ্যাসই নির্গত হবে না এতে। 

বর্তমানে ভারতের মানচিত্রজুড়ে চলাচল করে প্রায় ২০ লক্ষ বাস। আর তা চলে মূলত ডিজেল জ্বালানিতে। পরিসংখ্যান বলছে, এক একটি দূর-রুটের বাস থেকে নির্গত হয় প্রায় ১০০ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড। যা ভয়াবহ প্রভাব ফেলে পরিবেশে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হাইড্রোজেন ফুয়েল-সেল বাসের প্রচলন হলে অনেকটাই কমানো যাবে উষ্ণায়নের মাত্রা। 

কেপিআইটি টেকনোলজির শাখা সংস্থা ‘সেন্টিয়েন্ট ল্যাবস’, ন্যাশনাল কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি এবং সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ভারতের এই প্রথম হাইড্রোজেন ফুয়েল-সেল বাস। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রোজেক্ট হিসাবে ৩০-৪০টি দূরপাল্লার বাস চলবে আগামী ১২-১৫ মাস। এই প্রোজেক্ট সফল হল ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে হাইড্রোজেন-চালিত বাসের সংখ্যা। আগামী এক দশকে কমপক্ষে ৫ লক্ষ ডিজেল-চালিত বাসকে প্রতিস্থাপন করার লক্ষ্য নিয়েছে ভারতীয় সংস্থাটি। সেইসঙ্গে হাইড্রোজেন ফুয়েল-সেল চালিত জাহাজ নির্মাণেরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সেন্টিয়েন্ট ল্যাবস। 

আরও পড়ুন
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে নয়া প্রযুক্তি, জড়িয়ে দুই বাঙালি বিজ্ঞানী

কেবলমাত্র দূষণমুক্ত পরিবহনই নয়, হাইড্রোজেন জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনবে পরিবহনের খরচও। গবেষকদের মতে, যেখানে স্বাভাবিক যানে প্রতি কিলোওয়াট শক্তির জন্য ১০০০ ডলার খরচ হয়, সেখানে হাইড্রোজেন-চালিত বাসে এই খরচ নেমে আসবে মাত্র ৪০০ ডলারে। পাশাপাশি এই বাস সার্বিকভাবে চালু হয়ে গেলে, বায়োমাস-ভিত্তিক হাইড্রোজেনের উৎপাদনের জন্য বিকল্প উপার্জনের হদিশ দেওয়া যাবে কৃষকদেরও। 

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে ‘ব্লু কার্বন সিঙ্ক’

শুধু সেন্টিয়েন্ট ল্যাবরেটরিই নয়, হাইড্রোজেন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যান তৈরির দৌড়ে নেমেছে ভারতের আরও একটি অটোমোবাইল সংস্থা টাটা মোটরস। কিছুদিন আগেই ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটিও। সবমিলিয়ে এই নতুন প্রযুক্তির প্রচলন ভরসা দিচ্ছে দূষণমুক্ত ভবিষ্যতের…

আরও পড়ুন
কার্বন নির্গমন করছে বিশ্বের ১০টি সংরক্ষিত অরণ্য, জানাল ইউনেস্কো

Powered by Froala Editor

More From Author See More