সংরক্ষণ কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া ৮টি শ্বেতপুচ্ছ শকুনকে (White-Backed Vulture) অরণ্যের পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল আগেই। দীর্ঘ ১১ মাস অরণ্য পরিবেশে টিকে থাকার পর অবশেষে তাদের নিরাপদ বলে স্বীকৃতি দিলেন সংরক্ষণকর্মীরা। গতবছর অক্টোবর মাসে জটায়ু কনজারভেশন অ্যান্ড ব্রিডিং সেন্টার থেকে তাদের পরীক্ষামূলকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। যদিও রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সবসময় তাদের গতিবিধি নজরে রাখা হত। প্রথম প্রথম বেশ কিছু জটিলতাও হয়েছে। কিন্তু সেন্টারের কর্মচারীরা দ্রুত পৌঁছে গিয়েছেন অকুস্থলে। এখন তারা নিজেরাই নিজেদের মতো একটা বাসস্থান গড়ে তুলতে পেরেছে বলে জানাচ্ছেন সংস্থার কর্তারা।
একসময় ভারতের সর্বত্র অবাধ বিচরণ থাকলেও ক্রমশ কমে আসছে শকুনের সংখ্যা। আজ দেশের তিনটি শকুনের প্রজাতিই বিলুপ্তপ্রায়। ৯০-এর দশক থেকে পরবর্তী ৩০ বছরে প্রায় ৯৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে শকুনের সংখ্যা। আর তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে শ্বেতপুচ্ছ শকুনের সংখ্যাই। পরিসংখ্যান বলছে তা প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ। এরকম পরিস্থিতিতে শকুন সংরক্ষণের বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে বেশ কিছু জাতীয় সংস্থা। তার মধ্যেই অন্যতম হরিয়ানার জটায়ু কনজারভেশন অ্যান্ড ব্রিডিং সেন্টার। দেশের প্রায় ১৭টি অঞ্চল থেকে শকুনের জিন সংগ্রহ করে কৃত্রিম প্রজননের ভিত্তিতে পরীক্ষাগারে পাখির জন্ম দিয়েছেন গবেষকরা। পরীক্ষাগারের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশেই দেখা হয়েছে তাদের অভিযোজনের ক্ষমতাও। আর সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই ৮টি শ্বেতপুচ্ছ শকুনকে গতবছর ছেড়ে দেওয়া হয়।
রাডারের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি প্রতিটা শকুনের ডানায় লাল রঙের চিহ্ন এঁকে দিয়েছিলেন গবেষকরা। ফলে তাদের উপর নজর রাখা সহজ হয়েছে। তবে প্রাণসংশয়ের মতো ঘটনা না ঘটলে জঙ্গলের প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে তাদের নিজেদেরই লড়তে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তারা। এর মধ্যে কেবল যে তারা নিজেদের মতো বাসস্থান গড়ে তুলতে পেরেছে, তাই নয়। হিমালয়ান গিফন বা অন্যান্য সমগোত্রীয় পাখিদের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই পারস্পরিক বোঝাপড়া তাদের আরও নিরাপদ করে তুলবে বলেই বিশ্বাস গবেষকদের। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রথম প্রথম বেশিদূর উড়তেও পারত না পাখিরা। কিন্তু দ্রুত তারা অভিযোজিত হয়েছে। এখন এই ৮টি পাখিকে নিয়ে চিন্তার আর কোনো কারণ নেই। পাশাপাশি এই সাফল্য অন্যান্য শকুনের প্রজাতি সংরক্ষণের বিষয়েও পথ দেখাবে। তাই মৃত্যুর মুখ থেকেও ফিনিক্স পাখির মতো ফিরে এল ভারতীয় শকুন, একথা বলাই যায়।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দু’দশকে ১১ গুণ সংখ্যাবৃদ্ধি, শকুন সংরক্ষণে লড়ছে মহারাষ্ট্রের গ্রাম