মহামারীর দোসর হয়ে আসে দুর্ভিক্ষ। এমনটা ইতিহাসে বহুবার ঘটেছে। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতি যে এমনভাবে চোখে আঙুল দিয়ে সেই বাস্তবতা দেখিয়ে দেবে, তেমনটা আশা করেননি কেউ। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে সামতিকভাবে সামাল দেওয়ার অনেক প্রক্রিয়াই থাকা উচিৎ। কিন্তু বাস্তবে ভারতের অবস্থা যে তিমিরে সেই তিমিরেই। দারিদ্র্য আর অনাহারের সঙ্গে লড়াই করে কোনোরকমে বেঁচে থাকছেন মানুষ। দুবেলা খাবার জুটছে না অনেকেরই। এমনকি সদ্যজাত শিশুদেরও থাকতে হচ্ছে অনাহারে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৬৮ শতাংশ দিনমজুর পরিবারই অন্তত দিনে একবেলা না খেয়ে দিন গুজরান করছেন।
দিল্লি ইউনিভার্সিটির কিছু পড়ুয়ার মিলিত সমীক্ষা বলছে সরকারের বহু প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে সেভাবে কোনো সাহায্যই পৌঁছচ্ছে না। মার্চ মাস থেকে উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশের কিছু অঞ্চল নিয়ে শুরু হওয়া এই সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জঁ দ্রেজ, আনমোল সোমাঞ্চির মতো অর্থনীতিবিদও। দেখা গিয়েছে রেশনের সুব্যবস্থা নেই। এমনকি ন্যাশানাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্টের আওতায় যে কয়েকজন কিছু কাজ পেয়েছিলেন, তাঁরাও ঠিকমতো মজুরি পাননি। লকডাউনের পর থেকেই তাই ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই চলছে মানুষের। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথা উঠে এসেছে প্রথম থেকেই। তবে শুধুই পরিযায়ী শ্রমিক নয়, স্থানীয় পরিসরে কাজ করা দিনমজুরদের অবস্থাও একইরকম। এমনকি এই সময়ে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা বা সদ্যজাত শিশুদের জন্যও কোনো বিশেষ ব্যবস্থার বন্দোবস্ত নেই।
প্রকৃতি যখন মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তখন মানুষকেই হাতে হাত রেখে এই সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে হবে। কিন্তু যেভাবে ক্রমশ একাকিত্ব গ্রাস করছে আমাদের, সেখানে এমন সামাজিক সংহতি একরকম ব্যতিক্রমই বটে। তবে অন্তত সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা সাহায্য প্রত্যাশা করেছিলেন মানুষ। সেখানেও প্রতিশ্রুতিই সার। আর দেশের প্রায় অর্ধেক সম্পত্তির অধিকারী যে পুঁজিপতি সম্প্রদায়, তাঁরাও ফিরে তাকাচ্ছেন না অসহায় মানুষদের। নিজেদের দুর্ভাগ্যকে একরকম মেনেই নিয়েছেন মানুষ। এভাবেই আধপেটা খেয়ে বা অনাহারে হয়তো দুঃসময় পেরিয়ে যেতে পারবেন। বা হয়তো পারবেন না।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দারিদ্র্যকে ঠেকিয়েই একমাত্র সম্ভব ভাইরাসের মোকাবিলা, জানাল ইউএনডিপি