১ কোটি ছাড়াল করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা, আরোগ্য আর কতদূর?

আমেরিকার পর এবার ভারত। পৃথিবীর দ্বিতীয় দেশ হিসাবে ভারতেও এক কোটি সংক্রমণের গণ্ডি অতিক্রান্ত হল গত পরশুদিন। রবিবার রাতের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট সংক্রমিতের সংখ্যা বর্তমানে ১ কোটি ৫৬ হাজার ১৮৫ জন। ২০২০-র মার্চ মাস থেকে লকডাউন এবং কড়াকড়ি প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিলেও তার আগে থেকেই দেশে ছড়িয়েছিল ভাইরাস। সেই হিসেব মতো কোটিতে সংক্রমণ পৌঁছাতে সময় লাগল ১১ মাস।

তবে এই বিপুল পরিমাণ সংক্রমণের পরেও খানিকটা যেন স্বস্তিতে রয়েছেন চিকিৎসকরা। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ সংক্রমণের হার রীতিমতো চিন্তা বাড়িয়েছিল স্বাস্থ্য দপ্তরের। আশঙ্কা করা হয়েছিল অক্টোবর বা নভেম্বরের শুরুতেই ১ কোটিতে পৌঁছাবে আক্রান্তের সংখ্যা। বাস্তবে সেই পরিস্থিতিকে অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখলেন চিকিৎসকরা। 

গত রবিবার নতুন করে ভারতে আক্রান্ত হন সাড়ে ২৪ হাজার মানুষ। এই নিয়ে টানা ১ সপ্তাহ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা থাকল ৩০ হাজারের কম। যা মহামারীর বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের অন্যতম ইতিবাচক দিক হিসাবেই বিবেচনা করছেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি কমে এসেছে পজিটিভিটির হারও। বর্তমানে যা ১৩-১৪ শতাংশ থেকে কমে ৬.৫ শতাংশ মাত্র। এই হার ৫ শতাংশের মধ্যে চলে আসা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষামাত্র। যা এখন স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। পজিটিভিটির হার ৫ শতাংশের নিচে আনতে পারলে পরিস্থিতি আয়ত্তে এসেছে বলা যেতে পারবে।

তবে এই পরিস্থিতি আপাতভাবে নিরাপদ মনে হলেও, বিপদ যে একেবারে কেটে যায়নি— সেই সাবধানবাণীও দিয়ে রাখছেন চিকিৎসকরা। সংক্রমণ কমে আসায় সতর্কতার অভাব দেখা যাচ্ছে জনসাধারণের একটা বড়ো অংশের মধ্যে। অনেককেই দেখা যাচ্ছে মাস্ক না পরতে। যা ডেকে আনতে পারে দ্বিতীয় তরঙ্গের আঘাতকে। 

এই মুহূর্তে দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলা। আক্রান্তের গ্রাফ নিম্নমুখী হলেও বাংলায় দৈনিক সংক্রমণ ২ হাজারের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে। সুস্থতার হার জাতীয় গড় হারের তুলনায় খানিকটা বেশিই বাংলায়। তবে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি না হলে অনেকেই করাচ্ছেন না করোনার টেস্ট, ভর্তি হচ্ছেন না হাসপাতালে— রয়েছে এমন তথ্যও।

তবে ধীর সংক্রমণের গতির কারণেই অনেকটা সময় কিনে নেওয়া গেছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি দু-তিনটে টিকাও রয়েছে শেষ পর্যায়ের পরীক্ষাস্তরে। অপেক্ষা সরকারি অনুমোদনের। চূড়ান্ত টিকা বাজারে চলে এলে সংক্রমণ হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাকেও রুখে দেওয়া যাবে অনেকটাই। 

আরও পড়ুন
পৃথিবীজুড়ে আক্রান্ত ৫ কোটি, করোনা তবু ছুঁতে পারেনি এই দেশগুলিকে

তবে দেশের সমস্ত মানুষের টিকাকরণ না হওয়া পর্যন্ত দূরত্ববিধি এবং প্রয়োজনীয় সচেতনতা বজার রাখার অনুরোধ জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। করোনাভাইরাস সম্পূর্ণভাবে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত নিস্তার নেই কারোরই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির খুব কিছু রদবদল না হলে আশা করা যায় দেশের সংক্রমণের সংখ্যা দেড় কোটিতে পৌঁছানোর আগেই ভাইরাসকে হার মানাবে ভারত। আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে দেশের যাপনচিত্র। তবে তার জন্য ঠিক কতদিন অপেক্ষা করতে হবে মানুষকে, সেই উত্তর শুধু দিতে পারে সময়ই...

Powered by Froala Editor

Latest News See More