দৈনিক করোনা পরীক্ষা যত বাড়ছে, ততই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। আর এর মধ্যেই বুধবার ৫০ লক্ষের মাইলস্টোন পেরিয়ে গেল ভারতে মোট করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। ব্রাজিলকে টপকে করোনা আক্রান্তের তালিকায় ভারত দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল আগেই। এবারেও আমেরিকার পর ভারত দ্বিতীয় দেশ, যেখানে ৫০ লক্ষ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।
কেন্দ্র সরকারের রিপোর্ট বলছে দেশে ১০ লক্ষ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে সময় লেগেছিল ১৬৭ দিন। কিন্তু পরবর্তী ১০ লক্ষ সংক্রমণ ছড়াতে সময় লেগেছে মাত্র ২১ দিন। আর ৪০ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ পৌঁছতে সময় লেগেছে মাত্র ১১ দিন। সারা পৃথিবীতে কোনো দেশেই এত দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়নি আগে। একমাসের বেশি সময় ধরেই দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে প্রথম স্থানে ভারত। কিন্তু এই পরিসংখ্যান ততটুকুই, যতটুকু পরীক্ষায় ধরা পড়ছে। বাস্তব ছবি আরও ভয়াবহ বলে মনে করছেন অনেকে।
কিছুদিন আগেই আইসিএমআর-এর একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়, মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ৬০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় সেটা ধরা যায়নি। পরে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সংক্রমণের সংখ্যাও। বর্তমানে সারা দেশে দৈনিক প্রায় ১০ লক্ষ পরীক্ষা হলেও সেটাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা যে আমেরিকার রেকর্ড সংক্রমণের সংখ্যার (৬৬ লক্ষ) থেকেও অনেকটাই বেশি, সেটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই দেশে দৈনিক সংক্রমণের গ্রাফ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে গতকাল ৮৩৮০৯ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। আর তার ফলেই মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ লক্ষ ২০ হাজার। আর যথারীতি ১১ লক্ষ আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে প্রথম স্থানে মহারাষ্ট্র। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও খুব ভালো নয়। এখনও অবধি এ-রাজ্যে ২ লক্ষ ৯ হাজার মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া তো দূরের কথা, সংক্রমণ কমার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন
মে মাসেই ৬৪ লক্ষ করোনা আক্রান্ত দেশে : আইসিএমআর
অথচ এর মধ্যেই ক্রমশ জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। সড়ক পরিবহণ স্বাভাবিক হয়েছে অনেক আগেই। এর মধ্যে মেট্রো রেলও চালু হয়ে গিয়েছে দেশের মেগাসিটিগুলিতে। সরকারি ও বেসরকারি অফিস যেমন চালু হয়ে গিয়েছে, তেমনই স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়েও কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু সরকারি সংস্থা আবার দেশজুড়ে লকডাউন লাগু করার কথা জানালেও কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে সেই সম্ভাবনাও নস্যাৎ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে জনজীবনের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বরাবরই খুব দুর্বল। কিন্তু তার উপর দাঁড়িয়েও যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল, সেটা কি আদৌ নেওয়া হয়েছে এদেশে? লকডাউনের সময় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল প্রায় নগণ্য। ফলে বাস্তব পরিস্থিতির সামান্য ধারণাও তখন পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে যখন পরিস্থিতির খানিকটা আভাস পাওয়া গেল, তখন সরকার ক্রমশ লকডাউন শিথিল করতে উদ্যোগী। ভাবটা এমন, যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু এই মানসিকতা নিয়ে কি আদৌ সফল হওয়া যাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে? পৃথিবীর সবচেয়ে ঘন জনবসতির দেশের জন্য এই মহামারী কী নিদারুণ দুর্ভাগ্য নিয়ে আসবে, সেকথা সময়ই বলবে।
আরও পড়ুন
আড়াই মিনিটেই শনাক্ত করা যাবে করোনা, চমক বাঙালি বিজ্ঞানীদের
Powered by Froala Editor