ফুলের পুংকেশর চক্রের মধ্যে তৈরি হওয়া পরাগরেণুকে গর্ভকেশরচক্রের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজটা করে নানা প্রাণী। কোনোটা পতঙ্গ, কোনোটা পাখি বা কোনোটা স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের ভূমিকার কথা শুধু যেন বিজ্ঞানের বইতেই আটকে থাকে। বাস্তবে এইসব প্রাণীদের সংরক্ষণের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। তবে এর মধ্যেই দেরাদুনের কাছে হালদোয়ানিতে তৈরি হল দেশের প্রথম পলিনেটর পার্ক।
পলিনেটর পার্ক বিষয়টি ভারতীয়দের কাছে তেমন পরিচিত নয়। অবশ্য ইউরোপ ও আমেরিকায় এমন উদ্যোগ বিগত দুই দশকে দেখা গিয়েছে। মূলত গাছের সমাবেশ হলেও এই পার্কের উদ্দেশ্য পলিনেটর প্রাণীদের আকর্ষণ করা। পলিনেটর বলতে নানা প্রজাতির পতঙ্গ, প্রজাপতি, মথ, পাখি এমনকি কাঠবেড়ালির মতো ছোটো ছোটো স্তন্যপায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীতে ৭৫ শতাংশের বেশি উদ্ভিদের পরাগযোগের জন্য কোনো প্রাণীর সাহায্যের প্রয়োজন। এইসব প্রাণী হারিয়ে গেলে অন্তত ১ লক্ষ ৮০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠত।
উত্তরাখণ্ড বনবিভাগের আধিকারিক সঞ্জীব চতুর্বেদী জানিয়েছেন, শুধু পলিনেটর প্রজাতির প্রাণীদের সংরক্ষণই নয়, সেইসঙ্গে গবেষণার উদ্যোগও নেওয়া হবে। এখনও অবধি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সঙ্গে প্রাণীদের পারস্পরিক সম্পর্কের সম্মন্ধে খুবই কম জানা গিয়েছে। এখানে সেইসব তথ্য সংগ্রহ করার কাজ সহজ হবে। প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ পিটার স্মেটাক মনে করছেন, মানুষের মনে সচেতনতা তৈরির কাজেও এই পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। পাশাপাশি দূষণ এবং মানুষের নানাবিধ কাজের প্রভাবে এইসব প্রাণীদের মধ্যে কীধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, সে-বিষয়েও গবেষণা সম্ভব।
শুধুই বন্য উদ্ভিদ নয়, কৃষিক্ষেত্রেও পলিনেটরদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর ৩৫ শতাংশ কৃষিজ ফসলের ফলনের ক্ষেত্রে এইসব প্রাণীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সদ্য নির্মিত পলিনেটর পার্ক এইসব প্রাণীর সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে তার থেকেও বেশি করে প্রয়োজন সচেতনতা। সে-বিষয়ে বনবিভাগের উদ্যোগের দিকেই তাকিয়ে আছেন গবেষকরা।
Powered by Froala Editor