ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ আবর্জনার স্তূপ, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা

সাম্প্রতিক সময়ে, গোটা বিশ্বজুড়েই চর্চা হচ্ছে কার্বন নির্গমন নিয়ে। কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে আনতে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বিশ্বের সমস্ত দেশেই। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের থেকেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলে মিথেন। হ্যাঁ, এই জৈব গ্যাসটি কার্বন-ডাই-অক্সাইডের থেকেও প্রায় ৮৪ গুণ বেশি তাপ আটকে রাখে নিজের মধ্যে। মিথেন (Mithane) নির্গমনের ক্ষেত্রে এবার শীর্ষ তালিকায় উঠে এল ভারত। সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতই (India) হয়ে উঠেছে জলবায়ু পরিবর্তনের হটস্পট।

হ্যাঁ, ইউরোপিয়ান এজেন্সির স্যাটেলাইট কায়রোস এসএএস-এর নথি জানাচ্ছে তেমনটাই। বিশ্বব্যাপী মিথেন নির্গমনের তালিকায় শীর্ষেই রয়েছে আমেরিকা। তারপর রাশিয়া ও ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ রয়েছে যথাক্রমে চতুর্থ ও ষষ্ঠ স্থানে। তবে আশঙ্কার বিষয় হল, শুধু ভারত থেকেই নির্গত হয় বিশ্বের মোট নির্গমনের ২৫ শতাংশ মিথেন। 

সাধারণত, এই জৈব গ্যাসটি পাওয়া যায় খনিজ তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডারে। তাছাড়াও খামার প্রতিপালনের ক্ষেত্রেও তৈরি হয় ব্যাপক মাত্রায় মিথেন। সাধারণত, প্রাকৃতিক তেল এবং গ্যাস উত্তোলনের সময়ই মিথেন নির্গত হয় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ায়। তবে ভারত, পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ঘটনা একটু অন্যরকম। 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই তিনটি দেশেই সেভাবে তৈল উত্তোলন হয় না। ফলে, গ্যাস লিক হওয়ার আশঙ্কাও যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া কিংবা আরব-রাষ্ট্রগুলির থেকে অনেক কম। বরং, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আবর্জনার স্তূপই হয়ে উঠেছে মিথেনের মূল উৎস। দিল্লির গাজিপুর তো বটেই, নয়ডা, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ-সহ ভারতের প্রায় সমস্ত মেগাসিটিগুলিতেই রয়েছে বিশাল বিশাল আবর্জনার স্তূপ। আর সেখান থেকেই মিথেন নির্গত হচ্ছে ব্যাপার মাত্রায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধু গাজিয়াবাদ থেকেই প্রতি ঘণ্টায় নির্গত হয় ২.৭ মেট্রিক টন মিথেন। যা প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মোটরগাড়ির বাৎসরিক বায়ু দূষণের সমতুল্য। একই ছবি পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও। 

ভারতের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে মিথেনের মেঘ। সেই ছবিও ধরা পড়েছে স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে। কিন্তু আবর্জনার স্তূপ কি শুধুমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াগুলিতেই রয়েছে? দেখতে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া কিংবা ইউরোপের অন্যান্য উন্নত দেশেও বর্তমানে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ল্যান্ডফিল। অর্থাৎ, আবর্জনার পাহাড়। কিন্তু অন্যান্য দেশে আবর্জনা ফেলার সময় জৈব ও অজৈব বর্জ্যদের পৃথকীকরণ করা হয়। তারপর জৈব বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণে পৃথক করা হয় মিথেনকে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে অনুপস্থিত সেই পরিকাঠামো। দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু ছোটো গ্রামে জৈব বর্জ্য থেকে মিথেন উৎপাদন শুরু হলেও, পিছিয়ে রয়েছে উন্নত শহরগুলিই। ফলে, ক্রমশই বেড়ে চলেছে দূষণ। নিঃশব্দে একটু একটু করে বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে ভারত তথা বিশ্বের জলবায়ু। সাম্প্রতিক এই গবেষণা প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীমহল। এখন দেখার, এতকিছুর পর ভারত কোনো সদর্থক পদক্ষেপ নেয় কিনা… 

Powered by Froala Editor