এক নজরে নারায়ণ দেবনাথ সৃষ্ট সব কমিক চরিত্র

/১২

কার্টুনের সঙ্গে শতাব্দীপ্রাচীন যোগ রয়েছে বাংলার। এমনকি ভারতে মধ্যে প্রথম কার্টুন সংস্কৃতি পা রেখেছিল এই বাংলাতেই। আর কমিকস? পঞ্চাশের দশক থেকে বাংলার কার্টুন চরিত্রদের সবাক এবং জীবিত করে তোলার প্রয়াস নিয়েছিলেন আর্ট কলেজছুট এক তরুণ। নারায়ণ দেবনাথ। তাঁর হাত ধরেই কমিকসপাঠে অভ্যস্ত হয়েছে বাঙালি। এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক তাঁর তৈরি অমোঘ কমিক চরিত্রদের।

/১২

হাঁদা-ভোঁদা— এই দুই ‘তরুণ’ কমিক চরিত্র জনপ্রিয় হয়েছিল নারায়ণ দেবনাথের হাত ধরেই। যদিও তাদের জনক নন তিনি। পঞ্চাশের দশক থেকেই শুকতারায় অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হত হাঁদা-ভোঁদার কমিক স্ট্রিপ। নেপথ্যে ছিলেন শিল্পী প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়। হাঁদা-ভোঁদা চরিত্রদুটিকে পরিমার্জন করে সম্পূর্ণ গল্পের রূপ দেন নারায়ণ দেবনাথ। ১৯৬২ সালে ইস্ট-মোহনের লড়াই নিয়ে প্রকাশিত হয় এই যুগলের প্রথম কমিক স্টোরি ‘হাঁদা-ভোঁদার জয়’। তারপর বাকিটা ইতিহাস।

/১২

বাঁটুল দি গ্রেট— ষাটের দশক সেটা। কলকাতার গলিতে গলিতে তখন ব্যায়ামবীর মনোহর আইচের নাম। বাংলা তো বটেই, তৎকালীন সময়ে গোটা ভারতে তাঁর মতো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন না দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি। মনোহর আইচের ছবি মাথায় রেখেই বাঁটুল চরিত্রটিকে প্রাণ দেন নারায়ণ দেবনাথ। বলতে গেলে, বাংলার প্রথম ‘সুপারহিরো’-ও হয়তো বাঁটুলই। দস্যুদের সাক্ষাৎ যম সে। যার বুকে গুলি লেগে ফিরত যায় তাকে কে-ই বা সায়েস্তা করতে পারে?

/১২

নন্টে ফন্টে— হাঁদা-ভোঁদা ও বাঁটুল দি গ্রেট শুকতারায় পূর্ণাঙ্গ কমিকসের আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই, ক্রমশ চাহিদা বাড়তে থাকে নতুন কমিক চরিত্রের। শেষ পর্যন্ত প্রকাশকের অনুরোধেই আরেক কিশোর জুটি তৈরি করেন নারায়ণ দেবনাথ। নন্টে-ফন্টে। বোর্ডিং স্কুলে দুই কিশোরের দাপাদাপি, কেল্টুদার কীর্তি এবং সুপারিটেন্ডেন্টের শাসন— সব মিলিয়ে গোটা তরুণ প্রজন্মকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এই ধারাবাহিক কমিকসের গল্প। পঞ্চাশ বছর পেরিয়েও বাঙালির কাছে যাদের বয়স বাড়েনি এতটুকু।

/১২

গোয়েন্দা কৌশিক— ক্ষুরধার বুদ্ধি কিংবা ধুন্ধুমার ফাইটিং— যেকোনো দিকেই তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তদন্তে হাত লাগালে তার চোখ এড়িয়ে দুষ্কৃতিদের পার পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব বলাই চলে। না, শার্লক হোমস নন তিনি। নন জেমস বন্ডও। তিনি কৌশিক রায়। ধুরন্ধর এই কমিকস চরিত্রেরও জন্মদাতা নারায়ণ দেবনাথ। মার্শাল আর্ট কিংবা বক্সিং-এ তিনি সিদ্ধহস্ত তো বটেই, পাশাপাশি তাঁর আরেক অস্ত্র ডানহাতের ‘লৌহমুষ্ঠি’। বাংলা কমিকসে এমন তুখোড় ডিটেকটিভ চরিত্র রয়েছে হাতে গোনাই।

/১২

ইন্দ্রজিৎ ও ব্ল্যাক ডায়মন্ড— কৌশিক রায়ের মতো ইন্দ্রজিৎও ধুরন্ধর গোয়েন্দা। ইন্দ্রজিতের গল্প নির্মাণ করেছিলেন দিলীপ চট্টোপাধ্যায়। তবে গ্রন্থের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে সমস্ত অলংকরণের দায়িত্ব ছিল নারায়ণ দেবনাথের কাঁধে। পরবর্তীতে কিশোর ভারতী পুজো সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল ইন্দ্রজিতের বেশ কিছু কমিকস। সেগুলিও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল নারায়ণ দেবনাথের তুলির ছোঁয়াতেই।

/১২

বাহাদুর বেড়াল— ওদের যদি টম থাকে, তবে আমাদের বাহাদুর। হ্যাঁ, বাহাদুর কোনো মানুষ নয়। সে এক বেড়াল। তবে সবদিক থেকে সে মানুষের মতোই। ১৯৮২ সালে মূলত শিশু ও কিশোর পাঠকদের জন্যই এই চরিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন নারায়ণ দেবনাথ। কুবুদ্ধিতে বাহাদুর অদ্বিতীয়। তবে সেই বুদ্ধির ব্যবহারই যেন বার বার বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে তার কাছে। নিজেই বিপদে পড়ে নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য। বাহাদুর ছাড়াও ‘বুদ্ধিমান কুকুর’ নামের আরও একটি পশু চরিত্রকেও নির্মাণ করেছিলেন কিংবদন্তি কমিকস্রষ্টা।

/১২

ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু— ১৯৮৩ সালে ‘ছোটোদের আসর’ পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ এই কমিকস চরিত্র দুটির। সহসম্পাদিকে বেবী মজুমদার এবং শুভ্রা রায়ের অনুরোধেই এই কমিকস গল্পের প্লট তৈরি করেছিলেন নারায়ণ দেবনাথ। বছর দেড়েক পরই বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকাটি। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে গ্রন্থের আকারে ‘গোল্ডেন কমিকস’ থেকে প্রকাশ পায় গল্প।

/১২

শুঁটকি আর মুটকি— হাঁদা-ভোঁদা বা নন্টে-ফন্টের মতো এই মানিকজোড়ের কাহিনিও অত্যন্ত নিপুণভাবেই তৈরি করেছিলেন নারায়ণ দেবনাথ। তাদের মজার কাণ্ডকারখানা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। দেবসাহিত্য কুটীরের শুকতারা পত্রিকায়। বাংলার প্রথম মহিলা কমিকস চরিত্র শুঁটকি-মুটকিই। অবশ্য বিতর্কও কম হয়নি। মহিলামহলের আপত্তিতে কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশের পর অসম্পূর্ণভাবেই থেমে যায় এই গল্পের পথচলা।

১০/১২

পটলচাঁদ দ্য ম্যাজিশিয়ান— ১৯৬৯ সালে পত্রভারতীর ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকায় প্রথম আত্মপ্রকাশ পটলচাঁদের। একটি সংখ্যা প্রকাশের পরেই বন্ধ হয়ে যায় পটলচাঁদ কমিকস। তবে থেমে থাকেনি পথচলা। পরবর্তীতে ‘হরেকরকম’ এবং ‘পক্ষীরাজ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছে পটলচাঁদের বেশ কিছু কমিকস।

১১/১২

পেটুক মাস্টার বটুকলাল— নারায়ণ দেবনাথের সৃষ্ট শেষ ধারাবাহিক কমিকস চরিত্র বটুকলাল। বটুকলাল আদতে একজন স্কুল শিক্ষক। তবে খাবারের গন্ধ পেলে নিজেকে সামলানোই দায় হয়ে ওঠে তাঁর কাছে। সম্ভ্রম ভুলে খাবার চুরির সুযোগ খোঁজে সে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত প্রতিবারই ছাত্ররা বানচাল করে দেয় তার সমস্ত পরিকল্পনা। ১৯৮৪ সালে পাক্ষিক ‘কিশোর মন’ পত্রিকায় প্রথম আত্মপ্রকাশ এই কমিকস চরিত্রটির।

১২/১২

মার্ভেল কিংবা ডিসি-র মতো কমিকস প্রতিষ্ঠানে জনপ্রিয় চরিত্রগুলির স্রষ্টা কোনো একজন ব্যক্তিত্ব হলেও, তাঁদের অবর্তমানে সেই গল্পের ভার নিয়েছেন অন্যান্য শিল্পীরাও। সেদিক থেকে দেখতে গেলে নারায়ণ দেবনাথ সেই দায়িত্ব কোনোদিনই তুলে দিতে চাননি অন্যের হাতে। অনেকটা হার্জের টিনটিনের মতোই। সিংহাসন ছেড়ে চিরবিদায় নিলেও এইসব চরিত্রদের মধ্যে দিয়েই তিনি বেঁচে থাকবেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে, তা নিশ্চিত…

Powered by Froala Editor

More From Author See More