জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে নিঃস্ব অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলা

জেলার নাম অনন্তপুর। অর্থাৎ কিনা ঈশ্বরের অনন্ত আশীর্বাদ রয়েছে এই জেলার উপর। কিন্তু তারপরেও জেলার মানুষের বড্ড অভাব। অভাবটা মূলত বৃষ্টি। বৃষ্টির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) অনন্তপুর জেলাটি (Anantapur)। কয়েক বছরের মাত্র ঘটনা নয়। গত ২০ বছরের মধ্যে ১৮ বার খরা (Drought) দেখা দিয়েছে এখানে। জল না পেলে কৃষিকাজ হয় না। অথচ জেলার অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। বাধ্য হয়েই তাঁরা কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন অন্য পেশায়। কেউ কেউ আবার কাজের সন্ধানে ভিটেমাটি ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছেন ভিনরাজ্যে। ফলে কমছে জনসংখ্যাও।

পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলা। বরাবরই এখানে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম। কিন্তু তার মধ্যেও একটা নির্দিষ্ট গতিবিধি ছিল। সেই ঋতুচক্রই এখন অনিয়মিত হয়ে উঠেছে। ফলে আবহাওয়া দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণে তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি। কিন্তু বৃষ্টিপাত এতটাই অনিয়মিত হয়েছে যে কখনও খরা বা কখনও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ১৯৮২ সাল থেকেই এই অনিয়ম টের পাওয়া যাচ্ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা মারাত্মক চেহারা নিয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১৬ বার খরা এবং ৩ বার বন্যার কবলে পড়েছে অনন্তপুর। পরবর্তী বছরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে খরা দেখা দিয়েছে।


অন্যদিকে, গত ৩০ বছরে অনন্তপুর জেলায় কৃষিজমির পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই জমিগুলোও অনেক ক্ষেত্রেই জমির মালিকরা চাষ করতে চাইছেন না। কোনো ঠিকা চাষিকে ভাড়া দিয়ে দিচ্ছেন। অন্ধ্রপ্রদেশের অনেক জেলাতেই এমন ভাড়া দেওয়ার প্রথা আছে। তবে সেইসব জেলায় এক একর জমিতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যায়। এদিকে অনন্তপুর জেলায় একরপ্রতি ভাড়া মাত্র ৫০০ থেকে হাজার টাকা। কৃষিকাজ ছেড়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন বেঙ্গালুরু, হায়াদ্রাবাদ বা কেরালার কোনো শহরে। মহিলাদের অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন দেহব্যবসাকে। আর সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাচারের সংখ্যাও। গত ২০ বছরে অনন্তপুর জেলায় নারী ও শিশু পাচার মিলিয়ে ১৪ হাজার মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন
ধারাবাহিক খরার শিকার আমাজন, ৫০ বছরেই পরিণত হতে পারে সাভানায়

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই যে অনন্তপুর জেলার আজ এই অবস্থা, তাতে সন্দেহ নেই। তবে কৃষিপদ্ধতির বদলও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। ৯০-এর দশকে চিরাচরিত ফসলগুলির পরিবর্তে অনেকেই বাদাম চাষ শুরু করেন। আর বাদাম চাষের জন্য অনেকটা রোদের প্রয়োজন হয়। সেই কারণে কৃষিজমির আশেপাশের সমস্ত গাছ কাটা পড়তে থাকে। হঠাৎ গাছের সংখ্যা এবং ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলেই বৃষ্টিপাতের অনিয়ম বেড়ে গিয়েছে। এখন আর পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ারও উপায় নেই কৃষকদের কাছে। 

আরও পড়ুন
হারিয়ে-যাওয়া বিমানের সন্ধান দিল ক্যালিফোর্নিয়ার খরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ব্যাপক খরায় আক্রান্ত আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল, দেখা দিচ্ছে জল-যুদ্ধের সম্ভাবনাও