‘রিয়েল এস্টেট’ দ্বীপে সংরক্ষিত অরণ্য কানাডার বৃদ্ধের

দুই নদীর সংযোগস্থলে ছোট্ট একটি দ্বীপ। আয়তন বড়োজোর ৭ একর। ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই দ্বীপ যেন পরিপার্শ্বের সঙ্গে সমস্ত আঙ্গিকেই ‘বেমানান’। হ্যাঁ, বেমানানই বটে। যেখানে দুই নদী তীরবর্তী অঞ্চলেই গড়ে উঠেছে ইট, কাঠ, পাথরের সভ্যতা; সেখানে এই দ্বীপে জনবসতিই নেই কোনো। অথচ, এই দ্বীপ নাকি রিয়েল এস্টেটের তালিকায়! 

কথা হচ্ছে, কানাডার (Canada) অটোয়া এবং সেন্ট লরেন্স নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত ‘ইলে রন্ডে’ (Ile Ronde) নামের ছোট্ট দ্বীপটিকে নিয়ে। উন্নয়ন, শহরতলি ও সভ্যতার বিস্তার যেন থমকে গেছে ইলে রন্ডেতে এসে। আর তার নেপথ্যে রয়েছেন ৯৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। থর উইকস্ট্রোম (Thor Wickström)। 

আজ থেকে প্রায় ছ’দশক আগের কথা। ষাটের দশকের শুরুর দিক সেটা। এই দ্বীপেও জনপদ তৈরির পরিকল্পনা করে কানাডা সরকার। দ্বীপটি বিক্রি করার প্রস্তাবও ওঠে স্বভাবিকভাবেই। সেইসময় বড়ো অঙ্কের বিনিময়ে এই দ্বীপটি ব্যক্তি মালাকানার অন্তর্গত করেছিলেন থর। না, কোনো পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য নয়, বরং প্রকৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতেই কয়েক লক্ষ ডলার অর্থ খসিয়েছিলেন তিনি। 

অল্প বয়সেই সুইডেন থেকে কানাডায় এসে সংসার পেতেছিলেন থর। গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব ব্যবসা। তবে কাজের মাঝেই সুযোগ পেলেই নতুন দেশে আশপাশটা ঘুরে দেখতে বেরিয়ে পড়তেন প্রকৃতিপ্রেমী থর উইকস্ট্রোম। সেইভাবেই ‘ইলে রন্ডে’ আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। মুগ্ধ হয়েছিলেন ছোট্ট এই দ্বীপটির জীববৈচিত্রে। শ্যাগবার্গ, হিকোরি, উড ডাক, উইডজেন-সহ কয়েকশো প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বাস সেখানে। পাশাপাশি সেখানে দেখা মেলে বিরল নর্দার্ন ম্যাপ কচ্ছপের। বর্তমানে যা আন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিপন্নপ্রায় প্রাণীর তালিকায়। মানবসভ্যতার বিস্তার এই বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল কেড়ে নেবে, তা মেনে নিতে পারেননি থর। তাই ব্যক্তিগত পুঁজি খরচ করে দ্বীপটি কিনে নেন তিনি। 

আরও পড়ুন
যুদ্ধের ব্যয় কমিয়ে বিনিয়োগ হোক পরিবেশ-সমস্যায়, দাবি নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের

বিগত ছ’দশক ধরে এই দ্বীপের দেখভালের সমস্ত দায়িত্বই নিজের কাঁধে বহন করেছেন থর। দ্বীপের মাঝে নির্মাণ করেছিলেন পাখিদের জন্য কাঠের ঘর, কচ্ছপের কৃত্রিম আশ্রয়কেন্দ্র। কিন্তু কতদিন একা হাতে চালিয়ে যাওয়া যায় এই কর্মসূচি। দেখতে দেখতে বয়স ঠেকেছে ৯৩ বছরে। সম্প্রতি, নিজের এই ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে কানাডার সরকারের প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের হাতে তুলে দিলেন থর। এখন থেকে সংরক্ষিত অরণ্য হিসাবেই পরিগণিত হবে ইলে রন্ডে। প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান রক্ষায় কানাডিয়ান-সুইডিস ব্যক্তির এই অবদান কুর্নিশ জানানোর মতোই। 

আরও পড়ুন
পরিবেশরক্ষায় অবদান, বিশেষ পুরস্কার পেল কলকাতার জল-জাদুঘর

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
হারিয়ে যাবে পিরিপকুরা উপজাতি, চিন্তিত ব্রাজিলের পরিবেশকর্মীরা

More From Author See More