কালাজ্বরের চিকিৎসায় নতুন ওষুধ, পথ দেখাচ্ছেন বাঙালি বিজ্ঞানীরাই

প্রায় ১০০ বছর আগে কলকাতা শহরে বসেই কালাজ্বরের ওষুধ ইউরিয়া স্টিবামাইন তৈরি করেছিলেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। এর মধ্যে বাজারে এসেছে নতুন নতুন ওষুধ। বর্তমানে রোগটির প্রকোপ বেশ কমে এলেও কালাজ্বরের চিকিৎসা আজও বেশ জটিল বিষয়। এর মধ্যে এই বাংলার বুকেই একদল গবেষক নতুন করে কালাজ্বরের চিকিৎসায় পথ দেখাচ্ছেন। আর সেই গবেষণার সূত্র ধরেই পাওয়া গেল নতুন ওষুধের সন্ধান। ফেরোসেনিলকুইলোনিন নামের এই ওষুধ আগের প্রতিটি ওষুধের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। এমনটাই দাবি করছেন গবেষকরা।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক সুশান্তশেখর অধিকারী এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চিরঞ্জীব পালের তত্ত্বাবধানে এই গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। আর সম্পূর্ণ গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মহম্মদ ইউসুফ এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবারতি মুখোপাধ্যায়। ২০১২ সাল নাগাদ কালাজ্বরের চিকিৎসার জন্য নতুন ওষুধের মডেল তৈরি করেন অধ্যাপক সুশান্তশেখর অধিকারী। কিন্তু একটি মডেল তৈরি করার পর তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। আর তাই অধ্যাপক চিরঞ্জীব পালের সহায়তায় নতুন করে শুরু হয় পরীক্ষানিরীক্ষা। অবশেষে সম্পূর্ণ ওষুধটি তৈরি করে পেটেন্টের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। সেইসঙ্গে সম্পূর্ণ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকার ‘জার্নাল অফ মেডিক্যাল কেমিস্ট্রি’ পত্রিকায়।

অধ্যাপক অধিকারী জানালেন, “গবেষণার লক্ষ্য ছিল এমন একটা ওষুধ তৈরি করা, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হবে এবং অনেক সহজে ব্যবহার করা যাবে। আর এই দুটি বিষয়েই ফেরোসেনিলকুইলোনিন অনেক বেশি সফল।” অধ্যাপক চিরঞ্জীব পালের কথাতেও, “আগে যে-সমস্ত ওষুধ ব্যবহার করা হত তা লিভার এবং কিডনির যথেষ্ট ক্ষতি করে। কিন্তু এই ওষুধ সহজেই রেচন প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম।” পাশাপাশি, কালাজ্বরের চিকিৎসায় এটিই প্রথম ওষুধ যা ট্যাবলেট আকারে এবং ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে উভয়ভাবেই গ্রহণ করা যায়। ফলে চিকিৎসার জন্য রোগীকে সবসময় হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হবে না।

অধ্যাপক চিরঞ্জীব পাল বললেন, “কালাজ্বরের একটা সামাজিক চরিত্র আছে। যেহেতু বেলেমাছির মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়, তাই মাটির বাড়ির বাসিন্দারাই এই রোগে আক্রান্ত হন বেশি। আমাদের দেশের মতো গরিব দেশে সমস্যাটা তাই বেশ কঠিন। তাই ওষুধ তৈরির খরচও হাতের নাগালে থাকা প্রয়োজন। আমাদের তৈরি ওষুধটি সবচেয়ে কম প্রয়োগে সাফল্য দেখিয়েছে।” এমনকি এই ওষুধ কারখানায় তৈরির ক্ষেত্রেও কাঁচামালের অপচয় অনেক কম হবে বলে জানাচ্ছেন অধ্যাপক সুশান্তশেখর অধিকারী। তবে সমস্ত প্রক্রিয়ার পর ঠিক কবে এই ওষুধ বাজারে আসবে, সে-কথা বলা এখনই সম্ভব নয়। তবে বাঙালি বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা যে কালাজ্বরের চিকিৎসার চেহারা অনেকটাই বদলে দেবে, সে-বিষয়ে আশা রাখা যায়।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More