মায়ানমারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে ঝাঁঝরা ১৮ বিক্ষোভকারী, বিশৃঙ্খলা চরমে

আবার যেন ফিরে এল ২০০৭ সালের স্মৃতি। অভ্যুত্থানবিরোধী সমাবেশ ঘিরে রক্তাক্ত হয়ে উঠল মায়ানমার। এবার আর কোনো লুকোচাপা নয়। বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রকাশ্যেই গুলি চালাল মায়ানমারের পুলিশ। তাতে প্রাণ হারালেন কমপক্ষে ১৮ জন মানুষ। তাছাড়াও জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী লাইভ রাউন্ডের পাশাপাশি টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেটও ব্যবহার করা হয়েছে ইয়াঙ্গুন, দাওয়ে, মান্দালয়-সহ বেশ কয়েকটি শহরে।

আং সু কি-সহ মায়ানমারের প্রশাসনিক নেতৃত্বদের ক্ষমতাচ্যুত করার বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছিলেন মায়ানমারের সাধারণ মানুষ। গত এক মাস ধরেই চলছে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ। তবে ক্রমশ উত্তাপ বাড়ছিল যেন। অসহিষ্ণুতা বাড়তে বাড়তে ছাড়িয়ে গেল চরম শিখর। শনিবার সকাল থেকেই হিংস্র হয়ে উঠেছিল মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। চলতে থাকে অস্থায়ী সড়ক অবরোধকারীদের ওপর যদৃচ্ছ লাঠি চার্জ। তারপর রবিবার ফায়ারিং। সেইসঙ্গে ছিল স্টান্ট গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র রবিবারই প্রাণ হারান কমপক্ষে ১৮ জন। আহতের সংখ্যা ৩০-এরও বেশি। রবিবার সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে মায়ানমারে বিক্ষোভকারীদের রক্তাক্ত ছবি। আশ্চর্যজনকভাবে গুলি চালানোর আগে কোনোরকম সতর্কতা প্রদান করেননি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। উঠছে এমনটাই অভিযোগ। 

হতাহতের বাইরেও বেশ কিছু বিক্ষোভকারীকে বন্দি করেছে মায়ানমারের পুলিশ। সব মিলিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা প্রায় ৮৫০ জন। প্রতিবাদকারীদের মধ্যে বেশ কিছু চিকিৎসক, অধ্যাপক, প্রযুক্তিবিদ এবং শিক্ষক লুকিয়ে রয়েছেন স্থানীয়দের বাড়িতে। তাঁদের খোঁজেও চলছে জোর তল্লাশি। লাসিও, ইয়াঙ্গুন, মাইয়েক, বাগো, পোকোক্কু— সব কটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের ছবিই একই রকম। 

আরও পড়ুন
প্রতিবাদ রুখতে নতুন আইন মায়ানমারে, হতে পারে ২০ বছরের কারাদণ্ড

মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর এই কাজের তীব্র নিন্দা করেছে জাতিসংঘ। আন সু কি’র মুক্তির আবেদন জানিয়েছে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রও। তবে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি মায়ানমারের সেনাপ্রধানের তরফে। অন্যদিকে সম্প্রতি ভিডিও কলের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা করা হয় আন সু কি’র। তবে তাঁর আইনজীবীর অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে যান্ত্রিক গোলযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল বিচারের সময়। যার কারণে আন সু কি’র কোনো কথাই বলে উঠতে পারেননি তিনি আদালতে। 

তবে এই হিংস্র আক্রমণের পরেও অবস্থান থেকে সরবেন না বিক্ষোভকারীরা, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে রবিবারের পর। রাষ্ট্রপতির মুক্তিই শেষ কথা তাঁদের। অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, আহত হচ্ছেন, গ্রেপ্তার হচ্ছেন ঠিকই— তবে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা। এখন দেখার এই সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে আর কত অমানবিক হয়ে উঠতে পারে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। এর শেষ ঠিক কোথায়, জানা নেই কারোর…

আরও পড়ুন
সু কি’র মুক্তির দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ মায়ানমারে, শাসকের অস্ত্র জলকামান-রাসায়নিক

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More