'জন্মভূমি ইউক্রেন, আমায় মার্জনা করো'

গোড়ার কথা:

১৯৯১ সালে টুকরো টুকরো হয়ে গেল সোভিয়েত ইউনিয়ন। বেরিয়ে এল, আর্মেনিয়া-জর্জিয়া-ইউক্রেনের মতো অগুনতি দেশ। রাশিয়ার ভাষা-সংস্কৃতি-ইতিহাসের মধ্যে অনেকটাই মিল ছিল দেশগুলির মধ্যে। তবে নব্বই-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে নতুন করে লেখা হতে শুরু করল ইতিহাস। রাশিয়া (Russia) ও ইউক্রেনের (Ukraine) মধ্যে সম্পর্ক অম্লমধুর। অনেকটা পিঠোপিঠি দিদি-বোনের মতো। কিন্তু সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় ধীরে ধীরে। ক্রিমিয়া ও দনবাস অঞ্চলের খনিজ সম্পত্তির অধিকার, আঞ্চলিক মানুষের স্বতন্ত্রতার প্রশ্ন, ন্যাটোর ‘অনধিকার’ প্রবেশ...সংঘর্ষের নানা উপাদান জট পাকাচ্ছিল ক্রমে। ভারতে বসে সেই সংঘর্ষকে বিশ্লেষণ হয়তো আমরা করতে পারব না। সমগ্র ইউক্রেনবাসীর অনুভূতিকেও তুলে ধরার ক্ষমতাও আমাদের নেই। একজন মরমী ইউক্রেনীয় কবির রচনা অনূদিত হয়ে এসেছে আমাদের কাছে। সেটুকু তুলে ধরার চেষ্টাই আমরা করেছি। 

দীর্ঘদিন ধরেই রুশ ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে চর্চা করছেন কৌশিক গুহ। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ আর্সেনেই তারকোভস্কির কবিতা, কান্না ভাঙা গান, মারিনা স্ভেতায়েভার কবিতা, বুখারিন পরিচয় প্রভৃতি। তাঁর পরিচিত ইউক্রেনীয় কবি কাতিয়া কাপোভিচ সম্প্রতি একটি কবিতা পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। শিরোনামহীন কবিতাটির ভাষান্তর করলেন কৌশিক। কবিতাটি প্রকাশের অনুমতি প্রদানের জন্য আমরা কৌশিক ও কাতিয়ার কাছে কৃতজ্ঞ।

ভূমিকা:

কাতিয়া কাপোভিচ (Katia Kapovich) (২১ জুন, ১৯৬০) আধুনিক রুশ সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবি। মেয়েবেলার অনেকটা সময় কেটেছে ইউক্রেনে। এখন মার্কিন প্রবাসী।

ইউক্রেনীয় ও রুশিরা যেন হৃদয়ের ভাইবোন--প্রাচীন কাল থেকে তারা ধর্ম ও সংস্কৃতির ডোরে বাঁধা। তবু বহু ইউক্রেনবাসীর মনে ক্ষোভ আছে যে কৃষ্টির বিনিময়ে বড়দার ভূমিকা নিয়েছে রুশিয়া। সেই ক্ষোভের কি বৃহত্তর স্ফুরণ এই দ্বৈরথ?

কাতিয়ার রচনায় এক রক্তক্ষয়ী হানাহানির ছোঁয়া রয়ে গেছে। 

মূল কবিতা
*
Я выросла в поселке на Донбассе,
мы там играли в бывшую войну,
средь чёрных шахт по кучам шлака лазя –
дай снова в штольню памяти взгляну!
На месте том, где находилось сердце,
давили вишню, и пятно на вид
напоминало рану. Лето, детство,
и чей-то звонкий голос: «Он убит!»
Потом мы выходили из завала,
убитые с живыми шли домой,
но жив под сердцем тот кусок металла
и он морочит пулею стальной.
Мне видится: лежу средь старой штольни
с раздавленною вишней на груди.
Я маленький солдат со взрослой болью,
о, Украина-родина, прости!

ভাষান্তর:

দোনবাসের একটি গাঁয়ে বেড়ে ওঠা--
খেলতাম সেখানে আমরা আগে, যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা,
খনিজ ধাতুমূলের কালচে ঢিপির মাঝখানে--
সেই খনিটির স্মৃতি আবার দেখতে দাও ফিরে।
সেই, যেখানে পাওয়া গেছে খুঁজে হৃৎপিণ্ড জেনো,
থ‍্যাঁতলানো একটি চেরির দাগ, চোখে লেগে আছে
একটি ক্ষতচিহ্নের স্মৃতি, গ্রীষ্ম, শৈশবের দিন
রিনরিনে স্বর কারো, ‘খতম করেছে।’
বেরিয়ে এলাম তারপর, অবরোধ বাধা থেকে।
মৃত, জীবিতেরা একসাথে ফেরে ঘরে,
হৃদয়ের নিচে রয়ে গেল ধাতব টুকরো ছোট
সে ধোঁকা দিয়েছে জেনো একটি বুলেটে
এখন দেখছি শুয়ে আছি, পুরাতন গ্যালারির মাঝে
বুকে আছে থ‍্যাঁতলানো চেরি।
আমি ছোট সৈনিকের মতো, বড়দের ব্যাধি নিয়ে।
ওগো জন্মভূমি ইউক্রেন, আমায় মার্জনা করো।

আরও পড়ুন
বিশ্বের বৃহত্তম দেশ, প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশও; কেন ‘অজেয়’ রাশিয়া?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পরিত্যক্ত চের্নোবিল ঘিরেও গড়ে উঠছে যুদ্ধ আশঙ্কা