জাদুতে আচ্ছন্ন কলকাতা, শুরু হল তিনদিন-ব্যাপী ম্যাজিক মেলা

ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল। 

হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থে আজ এমনই আশ্চর্য দৃশ্যের সাক্ষী থাকল মোহরকুঞ্জ। চোখের সামনেই আস্ত দড়ি বদলে গেল জীবন্ত সাপে। তারপর সেই সাপ আবার মিলিয়ে গেল হাওয়ায়।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, এবার কলকাতা হয়ে উঠল ম্যাজিকময়। আজ থেকে কলকাতার মোহরকুঞ্জে শুরু হল ৩ দিনব্যাপী ম্যাজিকমেলা। নেপথ্যে ভারতীয় ম্যাজিশিয়ানদের সংগঠন ‘ফিমা’। ২০০৭ সাল থেকেই ম্যাজিক প্রশিক্ষণ, ম্যাজিক চর্চা এবং ম্যাজিকের প্রসার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছে এই সংস্থা। ২০০৯ সালে প্রথমবারের জন্য কলকাতার বুকে ম্যাজিক মেলার আয়োজন করেছিল ‘ফিমা’। তারপর থেকে প্রতিশীতেই কলকাতার বুকে বসে ম্যাজিকের আসর। এবারেও অন্যথা হয়নি তার। আর এই মেলার উদ্বোধনেই এমন আশ্চর্য খেলা দেখিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করলেন হারিয়ে যেতে বসা ভারতীয় মাদারিরা।

আজ দুপুর থেকেই মোহরকুঞ্জ প্রাঙ্গণে জমতে শুরু হয় ম্যাজিশিয়ানদের ভিড়। বাংলা তো বটেই, বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও হাজির হয়েছিলেন নানান ম্যাজিশিয়ান। সেই তালিকায় রয়েছেন অসমের খ্যাতনামা ম্যাজিশিয়ান অনুপ কুমার দাস এবং তেলেঙ্গানার উদয় ভাস্কর। শুরুতেই মূল মঞ্চের সামনে দুপুর তিনটের সময় শুরু হয় মাদারির খেলা। উল্লেখ্য, বর্তমানে ময়দানে ম্যাজিক দেখানোর অনুমতি দেওয়া হয় না মাদারিদের। তবে ‘ফিমা’-র সৌজন্যে এবার মাদারির খেলা দেখার সুযোগ পেল কলকাতা। 

এরপর প্রদীপ জ্বালিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন হ্যান্ডশ্যাডোগ্রাফার অমর সেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ফিমার ডিরেক্টর সুজিত মুখার্জি। হাজির ছিলেন তন্ময় কর্মকার, শৈলেশ্বর মুখার্জি, রজত নরসিংহম, শান্তনু সেনের মতো প্রবীণ ম্যাজিশিয়ানরা। অন্যদিকে অনুপ মল্লিকের গাওয়া গাজীর গানে স্মরণ করা হয় ভানুমতীকে।

উদ্বোধনের পর বিশেষ ম্যাজিক প্রদর্শন করেন ম্যাজিশিয়ান প্রশান্ত বোস, দিব্যেন্দু নাগ, ম্যাজিশিয়ান আলি, অমরনাথ রেড্ডি এবং কৌশিক বোস। পিছিয়ে ছিলেন না তরুণ প্রজন্মের ম্যাজিশিয়ানরাও। ম্যাজিক দেখিয়ে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে ৯ বছর বয়সি ম্যাজিক ক্যুইন মিম এবং অঙ্কন বোস। 

মহামারীর কারণে বিগত দু’বছর বন্ধ ছিল ম্যাজিক মেলা। তিন বছর পর এই মেলার প্রত্যাবর্তন যেন নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করল ম্যাজিকমহলে। দাঁড়ানোর প্ল্যাটফর্ম দিল ম্যাজিশিয়ানদের। আসলে সঙ্গীত, নৃত্য কিংবা সাহিত্যের মতো ম্যাজিককে হয়তো চিরাচরিত শিল্পের আওতায় ফেলেন না আমজনতা। আর সেই কারণেই হয়তো ভারতের বুক থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে জাদুবিদ্যা। হারিয়ে যেতে বসা এই শিল্পকেই নতুন করে বাঁচিয়ে তুলতে উদ্যোগ ফিমার। ম্যাজিকমেলার সৌজন্যেই এবার নতুন করে দাঁড়াবার জায়গা পাবেন ভারতীয় ম্যাজিশিয়ানরা, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

Powered by Froala Editor

More From Author See More