কয়েকদিন আগেই চলে গেল আরও একটি পরিবেশ দিবস। বিশ্বজুড়ে করোনা ও লকডাউনের পরিস্থিতিতে প্রকৃতি আবার নিজেকে ফিরে পাচ্ছে, এই ব্যাপারটাই সবাইকে আনন্দ দিচ্ছে। কত দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে, গাছেরা যেন আরও সবুজ হয়ে উঠেছে; পথে পথে বেরিয়ে পড়েছে পশু-পাখির দল। ভারতেও একই ছবি ফুটে উঠেছে। সত্যিই কি এই একটাই ছবি? তাসের উল্টো পিঠের মতো, তলায় তলায় বিপদের চোরাস্রোত কি বইছে না?
এই প্রশ্নটা উঠে আসত না। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসনের অন্দরে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার জন্য এমন কথা উঠে আসছে। যে লকডাউন প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে, সেই লকডাউনের মধ্যেই দেশের বেশ কিছু জায়গা কর্পোরেট কোম্পানি ও কারখানা তৈরির জন্য তুলে দেওয়া হল। এখন ঘটনা হল, এই নির্ধারিত জায়গাগুলোতে বন জঙ্গল তো আছেই, সঙ্গে রয়েছে বহু বন্যপ্রাণীর বাস। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত পরিবেশের ওপর আঘাত নিয়ে এল, এমনটাই বলছেন পরিবেশবিদরা।
উদাহরণ বলতে গেলে, শুধু ৭ এপ্রিলেই অন্তত ৩০টি প্রপোজাল গ্রহণ করেছে ন্যাশনাল বোর্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ এবং ফরেস্ট অ্যাডভাইসরি কমিটি। যার ফলে দেশের অন্তত ১৫টি টাইগার রিজার্ভ, স্যানচুয়ারি, ওয়াইল্ডলাইফ করিডোর-সহ বিস্তৃত জঙ্গল অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। এছাড়াও, আসামের ডিহিং পাটকই এলিফ্যান্ট রিজার্ভের একটা অংশে কয়লাখনি তৈরি করার কথাও চলছে। সেটা হলে জঙ্গলএর স্বাভাবিক পরিবেশই নষ্ট হয়ে যাবে। তেলেঙ্গানার আম্রাবাদের টাইগার রিজার্ভেও ইউরেনিয়াম সার্ভে করার অ্যাপ্লিকেশন মঞ্জুর করা হয়েছে। যদি পাওয়া যায়, তবে সেই ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
এরকম আরও বহু ‘নজির’ তৈরি হয়েছে ভারতে। আর সবটাই হয়েছে গোপনে। একদিকে বিভিন্ন রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে কথা বলছে। বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে। গোটা বিশ্ব জুড়ে আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু উল্টো দিকে সেই প্রশাসনের একপ্রকার মদতেই কর্পোরেটদের হাতে চলে যাচ্ছে দেশের বনাঞ্চল। সংকটে পড়েছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী। তাহলে কি আমাদের কাছে এই কর্পোরেট ব্যবস্থাটাই আসল? এই অত্যাধিক পুঁজির লোভটাই আসল? পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য যে সব উদ্যোগ, তা কি কেবল মুখেই?
আরও পড়ুন
তৈরি হবে রেলপথ, সংকটে পশ্চিমঘাট পর্বতের ২.২ লক্ষ গাছ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কাটা হবে জঙ্গল, ৩ লক্ষ গাছের জীবন বিপন্ন অরুণাচলে