এখন চারিদিকে বিপদ। ঘর থেকে বেরনো একদম বারণ। যদিও বা প্রয়োজনে বেরনোর দরকারও পড়ে, মুখে সবসময় যেন থাকে মাস্ক। ওটি ছাড়া বেরোলেই সমস্যা। এমন ঘোষণাই বিগত কয়েকমাস ধরে হয়ে আসছে ভারতে। শুধু ভারত কেন, গোটা বিশ্বেই এই সাবধানবাণী জারি আছে। কিন্তু পশ্চিমের দিকে গেলে, ছবিটা খানিক বদলে যায়। অত মাস্ক ব্যবহারের প্রচলন নেই সেখানে। সে আমেরিকাতেই হোক, বা ইংল্যান্ডেই। সবসময় মাস্ক পরে থাকা যেন অনেকটা ‘প্রাচ্যের প্রথা’! সত্যিই কি তাই? ইতিহাসের দিকে তাকালে একটু অন্য ছবি দেখা যাবে। বিশেষ করে আমেরিকার ইতিহাস তো বটেই!
চোখ ফেরানো যাক ১৯১৮ সালের দিকে। ভারতে তখন চলছে স্বাধীনতার লড়াই। সদ্য একটি বিশ্বযুদ্ধ দেখে ফেলেছে পৃথিবী। তারই মধ্যে শুরু হল রোগের প্রকোপ। ইনফ্লুয়েঞ্জা, বা স্প্যানিশ ফ্লু। ১৯১৮ থেকে ১৯২০— এই সময় বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হল। মারা গেল প্রায় ৫ কোটি মানুষ! মহামারির ভয়াবহতা মাত্রা দেখছেন তো! আর এই গোটা চিত্রে সবথেকে ভুক্তভোগী দেশ হল আমেরিকা। গোটা আমেরিকা রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে চলে যায়।
আসল ব্যাপারটা হল, এই সময় থেকেই জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার করার প্রচলন বেড়ে যায়। আর এর সূত্রপাতটা হয় আমেরিকাতেই! ১৯১৮-এর অক্টোবরে সান ফ্রান্সিসকোতে আবারও স্প্যানিশ ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মাত্রা বেড়ে গেলে তড়িঘড়ি সরকারি বৈঠক ডাকা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শুধু সান ফ্রান্সিসকো নয়, পারলে আমেরিকার সর্বত্র মাস্ক ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া হোক। সেটা দেওয়া হলও; আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম জনসাধারণের জন্য মাস্ককে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বলে ঘোষণা করা হল। শুধু তাই নয়, রীতিমতো অর্ডিন্যান্স জারি করা হল এর জন্য। খাওয়ার সময় আর ঘরে থাকার সময়টুকু বাদ দিলে বাকি সময় মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে নাগরিককে। নাহলেই, শাস্তি। ৫০ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা, নয়তো দশদিনের জন্য জেল— এই ছিল বিধান।
আজকে ঠিক যেমনভাবে সব জায়গায় মাস্কব্যবহারের প্রভার চলছে, তখনও সেসব শুরু হল। শুধু সান ফ্রান্সিসকোতেই থেমে থাকেনি এটি। আমেরিকার অন্যত্র তো বটেই; এমনকি প্যারিস, ম্যানচেস্টারেও মাস্ক ব্যবহারকে ‘এসেনশিয়াল’ ঘোষণা করা হল। গির্জা, রেড ক্রস-সহ অন্যান্য সংগঠন থেকে মাস্ক তৈরি ও বিলি করা আরম্ভ হল। গোটা বিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ল মাস্কের ব্যবহার। লক্ষ্য তো একটাই, কোনোভাবে যাতে ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসেন কেউ। এখনও পন্থা সেই একই। মাঝখান থেকে পেরিয়ে গেছে ১০০টি বসন্ত। সেদিনের ইনফ্লুয়েঞ্জার পরিবর্তে আজকে এসেছে করোনা। কিন্তু রাস্তা সেই একই।