রাস্তার ধারের ম্যানহোল বা বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক, আজও এই সমস্তকিছু পরিষ্কারের জন্য এক শ্রেণীর মানুষের উপরেই ভরসা রাখি আমরা। যাঁদের মেথর বলে পরিচয় দেওয়া হয়। কিন্তু এই কাজ যে তাঁদের প্রাণও কেড়ে নেয় অনেক সময়, সেই বিষয়ে হয়তো আমরা সচেতন থাকি না। তবে বিগত ১০ বছরে সারা দেশে নর্দমা এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, সেই সংখ্যা সত্যিই অবাক করে।
সম্প্রতি একটি আরটিআই-এর উত্তরে এই তথ্য প্রকাশ করেছে ন্যাশানাল কমিশন ফর সাফাই কর্মচারী বা এনসিএসকে। আর তাতে দেখা গিয়েছে ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৬৩১ জন সাফাই কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে কর্মস্থলেই। যদিও বিভিন্ন রাজ্য থেকে যেটুকু তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তার ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনসিএসকে।
রিপোর্টে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ২০১৯ সালে। এই বছরেই মারা যান ১১৫ জন। রাজ্যগুলির তালিকায় প্রথম স্থানে আছে তামিলনাড়ু। সেখানে এই ১০ বছরে মারা গিয়েছেন ১২২ জন। এর পর আছে উত্তরপ্রদেশ (৮১), দিল্লি (৬৩), কর্ণাটক (৬৩) এবং গুজরাট (৬১)। রিপোর্টে এটাও দেখা গিয়েছে, প্রতি বছর এরকম মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ২০১০ সালে সংখ্যাটা ছিল ২৭, ২০১৩ সালে ৬৮ এবং ২০১৯ সালে সেটাই দাঁড়ায় ১১৫-তে।
এই মুহুর্তে যে প্রযুক্তি মানুষের হাতে আছে তাতে যন্ত্রের সাহায্যেই সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেলা সম্ভব। ২০১৩ সালে এই সংক্রান্ত আইনও তৈরি হয়ে যায়। প্রোহিবিশন অফ এমপ্লয়মেন্ট অ্যাজ ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জার অ্যান্ড দেয়ার রিহ্যাবিলিয়েশন অ্যাক্ট অনুযায়ী এই কাজে কোনো মানুষকে নিয়োগ করা চলবেও না। অথচ আজ ৭ বছর ধরে এই আইনের কোনোরকম রূপায়ন সম্ভব হয়নি। এমনকি তার কোনো প্রচেষ্টাও দেখা যাচ্ছে না। মানুষের জীবন কি এতটাই সস্তা? নাকি আইন শুধু খাতায়-কলমেই তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত সবই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মতো অন্তঃসারশূন্য?
Powered by Froala Editor