ব্যাটে খরা, প্রথম একাদশ থেকে নিজেকে বাদ দিলেন স্বয়ং অধিনায়ক!

সালটা ১৯৭৪। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট ক্রিকেট সিরিজের জন্য হাজির হয়েছে ইংল্যান্ড। এমন একটা সিরিজ দেখার জন্য তখন সারা পৃথিবী মুখিয়ে রয়েছে। কিন্তু কেউই জানতেন না, এই সিরিজ সাক্ষী থাকতে চলেছে এক ব্যতিক্রমী ইতিহাসের। একদিকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড, আর অন্যদিকে সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নজরকাড়া অস্ট্রেলিয়া। এই পরিস্থিতিতে ইতিহাসের জন্ম অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন মাইক ডেনেস যা করলেন, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই। খেলায় গুরুতর চোট পাননি, অসুস্থ নন। অথচ সিরিজ চলাকালীন অধিনায়কের পদ ছেড়ে দিলেন তিনি। বিদায় নিলেন প্রথম একাদশ থেকেও। সম্ভবত ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন সিদ্ধান্ত আর কেউ কোনোদিন নেননি।

মাইক ডেনেসের সিদ্ধান্ত নিয়ে হইহই শুরু হয়ে গেল অচিরেই। সংবাদপত্রে তখন সবচেয়ে বড় খবর ডেনেসের পদত্যাগ। কেউ বলছেন কাপুরুষ, কেউ বলছেন মেরুদণ্ডহীন। অবশ্য মাইকের দলের অন্যান্য সদস্যরা তখন তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। টনি গ্রেগ তো সংবাদপত্রের সমালোচনার উত্তরে বলেই ফেলেছিলেন, এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বুকের পাটা থাকা চাই। অবশ্য অনেক পরে ডেনেস তাঁর বিরতি নেওয়ার প্রকৃত কারণ জানিয়েছিলেন। সিরিজের প্রথম থেকেই অস্ট্রেলিয়ার একমূখী আক্রমণ প্রতিরোধ করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল ইংল্যান্ডের বাহিনী। প্রথম টেস্টে চূড়ান্ত পরাজয়ের পর দ্বিতী টেস্টে কিছুটা সামাল দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় টেস্টে আবার পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। এই চাপ মাথায় নিয়ে ডেনেস নিজে খেলাটাই খেলতে পারছিলেন না। আর তাই তাঁর বিরতি প্রয়োজন ছিল। তাঁর কথায়, শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হলেও তিনি মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন।

সিরিজের শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে থমসনের বলের সামনে দাঁড়াতে পারছিলেন না কেউই। না, আউটও হচ্ছিলেন না। থমসন তো হাসতে হাসতেই বলতেন, ব্যাটসম্যানকে আউট করার বদলে আহত করেই বেশি মজা পান তিনি। ডেনেসের নিজের খেলাও ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল। তৃতীয় টেস্টের শেষে আর মাত্র দুটি সুযোগ। একটিতেও হেরে গেলে সিরিজে পরাজয় নিশ্চিত। অতএব এবার সেই অবিশ্বাস্য সিদ্ধান্তই নিতে হল তাঁকে। অবশ্য পঞ্চম টেস্ট চলাকালীন এডরিখ বিদায় নিলে আবারও বাইশ গজে দেখা যায় ডেনেসকে। তবে এবার তিনি অজি বাহিনীকে প্রতিটা বলে উত্তর দিতে প্রস্তুত।

সমস্ত সমালোচনার জবাব অবশ্য দিয়েছিলেন সিরিজের ফলাফলেই। সকলকে অবাক করে দিয়ে শেষ দুটি টেস্টেই জয় ছিনিয়ে নিল ইংল্যান্ড। গ্রেগ চ্যাপেলের অজি বাহিনীও যেন নিজেদের পরাজয় বিশ্বাস করতে পারছিল না। আর সিরিজে সবথেকে বেশি রানের রেকর্ডও মাইক ডেনেসের। শেষ টেস্টে তাঁর ব্যাট রীতিমতো ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল অজি বাহিনীকে। আজও ক্রিকেটের ইতিহাসে সেই সিরিজ এক ইতিহাস। আর প্রতিটা ইতিহাসের গড়ে ওঠার মধ্যেই তো থাকে বিরূপ সমালোচনার গল্প। সেইসব সমালোচনাকে জয় করেই নায়ক হয়ে উঠেছিলেন মাইক ডেনেস।

Powered by Froala Editor

Latest News See More